নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, মানুষ মাত্রেই ভুল। মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে সব জানি এ রকম আমি কখনো মনে করি না। কাজেই কর্পোরেশন পরিচালনা করতে যদি কোন ভুলত্রুটি হয়, আপনারা তা আমাকে ধরিয়ে দিবেন। আমি সংশোধন করে নিবো। এ ব্যাপারে নগরীর সর্বস্তরের জনসাধারণ, সুধীজন, সংবাদ মাধ্যমের সহায়তা কামনা করি।
তিনি ০৩ জুন বৃহস্পতিবার সকালে কর্পোরেশনের আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনের কে.বি আবদুস ছাত্তার মিলনায়তনে মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ পরবর্তী ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
শুরুতে নগরজুড়ে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামের সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থিত সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট উপস্থাপন করা হয়। এরপর মেয়র সংক্ষিপ্তাকারে বক্তব্য রাখেন। প্রশ্নত্তোর পর্বে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা মেয়রের কাছে নগরীর বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জানতে চান।

উল্লেখযোগ্য প্রশ্নের মধ্যে ছিল মশার উপদ্রব না কমা, সেবাসংস্থা মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ কি? মেয়রের ৫ বছরের দায়িত্ব পালনের পরিকল্পনা কি? পি.সি রোডে উন্নয়ন কাজ কবে শেষ হবে? জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ কি ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হবে? এবারো জলাবদ্ধতা হবে কি নগরীতে? ক্রাশ প্রোগ্রাম ব্যয়ের কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু আয় উল্লেখ নাই কেন? আগ্রাবাদ বক্স কালভার্টের সিলট্রেপ নস্ট, নেট সরানো হয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসনে তা পরিস্কার করা হবে কি না? মেয়রের জন্য নতুন গাড়ি ক্রয় করা হবে কি না?
এসব প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের ১০০ দিনে ক্রাশ প্রোগ্রামে ওয়ার্ডভিত্তিক প্যাচওয়ার্ক আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওয়াসার সংযোগ লাইনের জন্য মেরামত করা রাস্তা আবার কাটা হচ্ছে। যেমন সদরঘাট স্ট্যান্ড রোড, মেরামতের পর লাইনের লিকেজের কারণে এই সড়ক ওয়াসা আবারো কাটলো, এতে বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়ক নস্ট হয়েছে আর দূর্নাম হয় কর্পোরেশনের। এলইডি লাইট স্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল। ৩০টি রাস্তা ৭৬ কিলোমিটার অংশে ২৯৬০ পোলের সাহায্যে ৫০১১টি এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে। নগরীর সৌন্দর্য্যবর্ধনের ক্ষেত্রে রাস্তায় মিডিয়ান ও ফুটপাত রংকরণের ৭০ ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কোভিড-১৯ এর কারণে কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় কমে গেলেও অন্যান্য ব্যয়ের পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত কর্পোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মোট ৩৩ জনকে ৬৭ লাখ ২৫ হাজার ১১০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কাজেই গত তিন মাস অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আনুতোষিকের কোন টাকা পরিশোধ করা হয়নি যে অপপ্রচার বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি আরো বলেন, কোভিডকালীন নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুবিধায় নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি লালদিঘীস্থ চসিক পাবলিক লাইব্রেরীর ভবনে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, এ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা।
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব শুধু নগরীর ৩ ফিটের নালাগুলো পরিস্কার করা। এছাড়া মেগা প্রকল্পের কাজের কারণে সমস্ত বড় নালা,খালে বাঁধ রয়েছে। ফলে পানিবদ্ধ অবস্থায় আছে। আর বদ্ধ পানিতে মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়, এতে একদিকে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হয় অপরদিকে মশার উৎপাত ও কমছেনা। তারপরও মশার উৎপাত বন্ধে ওষুধের গুণাগুণ যাচাই ও কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সহায়তায় প্রফেসর ড. রবিউল আলমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা গবেষণা করে প্রতিবেদন ও পরামর্শ দিলে শিঘ্রই এই নিয়ে কাজ শুরু করবো।
এ সময় কর্পোরেশনের অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানান।
মতবিনিময় সভায় মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি আমার ১০০ দিনের কার্যক্রমে কাউকে নগরীর কোন ফুটপাত বা জায়গা ইজারা দেয় নাই। কাউকে কোন বিলবোর্ডও লাগানোর অনুমতি দেয়া হয় নাই, যা দেয়া হয়েছে তা পূর্বে। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেমন কাজীর দেউড়িতে ফুটপাত দখলের বিষয়ে জেনে পরদিন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভেঙে দিয়েছি। কাজেই ভুল বুঝার কোন অবকাশ নাই। আগামীতেও কোন অন্যায়কারী দখলবাজ আমার কাছে প্রশ্রয় পাবে না।
রাতে ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, রাতে ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের উদ্যোগ ভাল ছিল। সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির এই কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। তবে এখন যে তা বন্ধ এটা নিয়ে আমি কোন অফিস আদেশ বা মৌখিক নির্দেশও দিইনি। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় আপাতত রাতে আবর্জনা পরিস্কার করা হচ্ছে না। পরিস্থিতির উন্নতি হলে শিঘ্রই তা আবার শুরু হবে।
এ সময় মেয়র সার্বিক বিষয়ে তার মেয়াদকালে গণমাধ্যমের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, আপনারা যে কোন ভুলত্রুটি সম্পর্কে জানালে, জনস্বার্থে তা সংশোধন করে সামনে এগিয়ে যাব।
অনুষ্ঠানে প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দীন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর মো. শহীদুল আলম, মো. এসরারুল হক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চসিক সচিব খালেদ মাহামুদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরীসহ চসিকের পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।