[english_date] | [bangla_day]

ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড : এটি মূলত খাবার

লাইফষ্টাইল ডেস্ক: সুস্থ থাকার সাধারণ উপায় দুটি। কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিলে ওষুধের মাধ্যমে তা নিরাময় করা। অথবা, রোগের সঙ্গে শরীর যেন সহজে লড়াই করতে পারে তার আগাম ব্যবস্থা নেওয়া। এজন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই। পরিমাণমতো পুষ্টি উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে একজন মানুষ প্রায় সব রোগ থেকেই সুরক্ষিত থাকতে পারেন।

সমস্যা হলো, চারপাশে এত ভেজালের ভিড়ে অর্গানিক খাদ্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অন্যদিকে, কোন খাবারটি কী পরিমাণ খেলে সর্বোচ্চ উপকার মিলবে তা সম্পর্কে জানেন না বেশিরভাগ মানুষ। এক্ষেত্রে, কার্যকরী সমাধান হতে পারে ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড।

ফাংশনাল ফুড কী?

ফাংশনাল ফুড বলতে মূলত বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদানসমৃদ্ধ এমন খাবারকে বোঝানো হয় যা দেহের বিভিন্ন কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি নানা রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। অন্যভাবে বলা যায়, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান ছাড়াও যেসব খাবারে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, প্রোবায়োটিকস ও ফাইবার রয়েছে সেগুলোই ফাংশনাল ফুড। শাক-সবজি, ফল, বাদাম, শস্যবীজ সবকিছুই ফাংশনাল ফুডের উৎস। পরিচিত কিছু ফাংশনাল ফুড হলো- হলুদ, আদা, মধু, দারুচিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ ইত্যাদি।

ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড কী?

বিভিন্ন ফাংশনাল ফুডের পুষ্টিগুণ যখন স্বীকৃত উপায়ে ফর্মুলেটেড করে ক্যাপসুল, ট্যাবলেট কিংবা তরল সিরাপের আকারে রূপান্তরিত করা হয় তখন একে ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড বলা হয়। এই প্রক্রিয়ার একজন মানুষের কোনো শারীরিক সমস্যার জন্য ঠিক যতটুকু পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন, ততটুকুই ব্যবহার করা হয়।

ওষুধ আর ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুডের পার্থক্য

অনেকেই মনে করেন যেহেতু ক্যাপসুল বা সিরাপ হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তার মানে ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড এক ধরনের ওষুধ। এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কখনো কি ভেবেছেন, যখন ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, তখন মানুষ কীভাবে রোগের বিরুদ্ধে লড়ত? সেসময় বিভিন্ন খাদ্যকে রোগ মুক্তির উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে যে খাবারগুলো ফাংশনাল ফুড নামে পরিচিত হয়।

ফাংশনাল ফুড কথাটির সর্বপ্রথম উদ্ভব হয় জাপানে। ১৯৮৪ সালে বিষদ গবেষণা শেষে ফাংশনাল ফুডকে সংজ্ঞায়িত করা হয়- ‘বিশেষ উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য সামগ্রী যা শরীরের জন্য উপকারক’। পরবর্তীতে ফাংশনাল ফুডের ব্যবহার জাপান ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় ইউরোপ, আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বে।

এবার আসা যাক ওষুধের প্রসঙ্গে। ওষুধ হলো এমন রাসায়নিক দ্রব্য যার প্রয়োগ দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এর মাধ্যমে রোগ নাশ বা প্রতিকার হয়। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট সময় গ্রহণ করতে হয়।

অন্যদিকে বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান থাকা ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুডে কোনো রাসায়নিক থাকে না। এটি নির্দিষ্ট সমস্যা নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এতে পুষ্টি উপাদান ছাড়াও এমন কিছু উপাদান থাকে যা দেহের বিভিন্ন উপকারে লাগে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হলুদ একটি মশলা, এতে আছে ‘কারকিউমিন’ নামক বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান। এটি নানা শারীরিক সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

অনেকে আবার একে ‘ফুড সাপ্লিমেন্ট’ মনে করেন। এটিও ভুল ধারণা। আমার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে থাকা খাবারগুলো কনভেনশনাল ফুড হিসেবে পরিচিত। এসব খাবার থেকে শরীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। কোনো কারণে দেহে কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিলে তা পূরণের জন্য চিকিৎসক ফুড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ভিটামিন বি ক্যাপসুল, মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট, ভিটামিন ই ক্যাপসুল ইত্যাদি। কিন্তু ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড শরীরকে দীর্ঘকালীন পুষ্টি উপাদান দেয়।

ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুডে সঠিক উপাদান ব্যবহার করা হয় কি?

প্রথমে চলুন কিছু ফাংশনাল ফুড এবং এদের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই- আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, কারকিউমিন এমন একটি উপাদান, যা একাই একশোর বেশি রোগ সারাতে পারে। হলুদ এই উপাদানের সবচে ভালো উৎস। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে কারকিউমিন। এটি আর্থ্রাইটিস, অ্যাজমা, হার্টের রোগ, অ্যালঝাইমার, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

আদা একটি পরিচিত ফাংশনাল ফুড। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি সিক্স, ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা, ফসফরাস, রাইবোফ্লাবিন, নিয়াসিন, ফোলেট। এটি জয়েন্টের ব্যথা সারানো, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ, ইমিউন সিস্টেম এবং লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, হজম শক্তি উন্নত, বমি ভাব কমানো ইত্যাদি কাজ করে থাকে।

আমেরিকার স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েবএমডি’র মতে, লবঙ্গতে অনেক খনিজ উপাদান ছাড়াও বায়ো-অ্যাকটিভের একাধিক উপাদান পাওয়া যায়। আর তাই মশলাটি কলেরা, যকৃতের সমস্যা, ক্যানসার, শরীরে ব্যথা ইত্যাদি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সক্ষম।

একইভাবে ফাংশনাল ফুডের তালিকায় থাকা দারুচিনি, গোলমরিচের মতো মশলাগুলো নিজ গুণে সমৃদ্ধ। মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। চেরিজাতীয় ফলও শরীরকে রোগের সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত করে।

আমাদের দেশে ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড অতটা পরিচিত নয়। তবে আশার কথা, ২০২০ সাল থেকে দেশের বাজারে সর্বপ্রথম হিসেবে অর্গানিক ফর্মুলেটেড ফুড বাজারজাত করছে অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেড। কারকুমা ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করা তাদের বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহার করা হয়েছে অর্গানিক সব উপাদান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো- কারকিউমিন, হলুদ গুঁড়া, আদা তেল, লবঙ্গ তেল, দারুচিনি তেল, গোলমরিচ তেল, জায়ফল, মধু, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, চেরি, মালবেরি, বিশুদ্ধ পানি।

ইউএসডিএ অর্গানিক সার্টিফাইড এসব পণ্যের তালিকায় আছে টারমারিক ইমিউন বুস্টার, সুপারফুড, হেলদি গাট, জয়েন্ট কেয়ার ইত্যাদি। এই ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুডগুলো গ্রহণের মাধ্যমে দেহের ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, নারীদের পিরিয়ডের সমস্যা সমাধান, অন্ত্রের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখা, অস্থিসন্ধির কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।

আসল ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড চিনবেন কীভাবে?

ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুড কেনার সময় দেখে নিন এটি ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (USDA) অর্গানিক সার্টিফাইড কিনা। এতে বোঝা যাবে এটি তৈরিতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সংগৃহীত। পাশাপাশি পণ্যটি ISO ও US-FDA রেজিস্টার্ড কিনা তাও দেখে নিন।

দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকতে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভরসা রাখতে পারেন ফর্মুলেটেড ফাংশনাল ফুডে। সঙ্গে খাদ্যাতালিকায় রাখুন শাক-সবজি ও মৌসুমি ফল। প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়