মহেশখালীর ইউএনও এর মাধ্যমে মহেশখালী-কক্সবাজার নদী পথের উপর সেতু নির্মাণের
দবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান
প্রেস বিজ্ঞপ্তি: মহেশখালী: ০১/১০/২০২০ইং।
কক্সবাজার হতে মহেশখালী নদী পারাপারের উপর সেতু নির্মানের দাবীতে নানান যুক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে “মহেশখালী উন্নয়ন পরিষদ” ও “সেতু চাই আন্দোলন, মহেশখালী সিটিজেন ফোরাম, মহেশখালীর আলোর সম্পাদক ও বিভিন্ন সমাজিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গরা। ১লা অক্টোবর বিকাল ৪ টায় মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহাফুজুর রহমান এর নিকট স্মারকলিপি প্রদানকালে উল্লেখিত সংগঠন সমূহের প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আবেদনকারীরা তাদের লিপিতে কক্সবাজারের সাথে মহেশখালীর সংযোগস্থাপনে সেতু নির্মানের নানান প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেন। তাতে বলা হয় বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ বলে খ্যাত অত্র উপজেলার লোকসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ ও এই জনপদের মানুষ অত্যন্ত শান্ত ও কঠোর পরিশ্রমী। আপনার নেতৃত্বধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই অবহেলিত দ্বীপাঞ্চলকে ডিজিটাল আইল্যান্ড হিসাবে ঘোষণা করে। ফলশ্রুতিতে এই ডিজিটাল আইল্যান্ড এ সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করে। আপনার সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প অত্র এলাকায় স্থাপনের জন্য প্রায় ৬ হাজার একর এর অধিক জমি অধিগ্রহণ করে। অত্র উপজেলার জনগণ উচ্চবাচ্য ছাড়া তাদের নিজস্ব জমি আপনার সরকারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনের জন্য ছেড়ে দিয়েছে ।
আপনার সরকার অত্র মহেশখালীতে ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনের প্রস্তাবনা করেছে। বর্তমানে সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে চলমান প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ২টি, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালণ লাইন স্থাপন, সোনাদিয়ায় ইক্যু ট্যুরিজম প্রকল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন, আদিনাথ মন্দির ও বৌদ্ধবিহারে পর্যটন ষ্পট স্থাপন। উল্লেখ্য যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এই মহেশখালী সোনাদিয়া দ্বীপে ২ রাত অবস্থান করে। তারই ফলে উক্ত সোনাদিয়াকে আপনি ইক্যু ট্যুরিজম এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছেন।
বর্তমানে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ পারাপারটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক, ঝুঁিকপূর্ণ এবং নানান হয়রানীতে অত্র উপজেলার জনগণ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। সারা বছরে অত্র উপজেলার মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে উক্ত নৌ চ্যানেল পাড়ি দেয়। ফলশ্রুতিতে প্রতি বছর অত্র দ্বীপাঞ্চলের মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। গত ২০/০৯/২০২০ইং তারিখ সন্ধ্যা ৬:০০ ঘটিকার সময় মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ পারাপারে নৌ দূর্ঘটনার কারণে অত্র উপজেলার মেধাবী ছাত্র আশরাফুল ইসলাম তোফায়েল ডুবে যায় এবং ২২/০৯/২০২০ইং তারিখে সোনাদিয়ায় তার লাশ সহ আরো ৩ জন ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। অতীব দু:খের সঙ্গে জানাচ্ছি যে,গত ০৬/০৫/১৯৮৪ইং তারিখে আমাদের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক এর পিতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি এবং তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব এডভোকেট এস.এম. রফিক উল্লাহ উক্ত মহেশখালী চ্যানেলে নৌকা ডুবিতে মৃত্যুবরণ করেন।
এখানকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে মৎস্য আহরণ, লবণ, চিৎড়ি ও পান চাষ। অত্র উপজেলার কোন মানুষ অসুস্থ/মারা গেলে যদি সমুদ্র পথে পাড়ি দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে ১২০ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে পৌছাঁতে হয়। তদ্রুপভাবে আহরণকৃত কোন পণ্য বিক্রি/আনা নেওয়া করতে ও একই ভোগান্তি পোহাতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬ হাজার একর এর অধিক জমি দিয়ে দিয়েছে, তার বিনিময়ে হলেও মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ পথে সেতু স্থাপনের আবশ্যকতা মনে করি। বর্তমানে উক্ত নৌ পারাপারে সেতু স্থাপন এখানকার মানুষের জনদাবীতে রুপান্তরিত। সমপ্রতি নৌ দুর্ঘটনার পর সেতু স্থাপনের জন্য একাধিক মানববন্ধন ও মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,বিভিন্ন পেশাজীবি শ্রেনীর ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ জনগণ স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহন করে।
মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ পারাপারে নদী বন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আপনার সরকার বিগত ০৬/০২/২০১০ইং তারিখে সরকারী গেজেট জারি করে। বৃহৎ সেতু সহ অন্যান্য অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রেরণের জন্য সেতু বিভাগ থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর ২৬/১১/২০১৯ইং তারিখে চিঠি প্রেরণ করেন। পরর্বতীতে উপজেলা নিবার্হী অফিসার, মহেশখালী,জেলা প্রশাসক কক্সবাজার মহোদয়কে সেতু স্থাপনের অবস্থান, বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব, সম্ভাব্য যানবাহন চলাচলের সংখ্যা এবং জনস্বার্থের গুরত্ব ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে গত ০২/০১/২০২০ইং তারিখে চাহিদা পত্র প্রেরণ করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা জানি আপনি এই দ্বীপাঞ্চলের মানুষকে অত্যন্ত ভালবাসেন এবং অত্র দ্বীপাঞ্চলের উন্নয়নের উপযোগিতার কথা চিন্তা করে আপনার সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো এখানে স্থাপনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এই দ্বীপাঞ্চল একদিন বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপনার সরকারের সাথে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে।
আরো বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত অত্র দ্বীপাঞ্চলের মানুষের জান-মাল রক্ষার রক্ষার স্বার্থে উক্ত মহেশখালী-কক্সবাজার নদী পথে সেতু নির্মানের দাবী করেন। আবেদনকারীরা আশা করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই দ্বীপের মানুষের উন্নয়ন জনস্বার্থ বিবেচনা করে দ্রুত সেতু নির্মানের কার্যক্রম শুরু করে কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের উন্নয়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন জে.এইচ.এম. ইউনুছ – সভাপতি – মহেশখালী উন্নয়ন পরিষদ, মাহাবুব রোকন – টিম লিডার – সেতু চাই আন্দোলন, ফরিদুল আলম দেওয়ান – সম্পাদক – মহেশখালী উন্নয়ন পরিষদ, আবুল বশর পারভেজ – সাংগঠনিক সম্পাদক- মহেশখালী পৌর সিটিজেন ফোরাম, মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল সোহাগ – প্রভাষক- মহেশখালী কলেজ ও আমিনু