মিরসরাই প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে মুক্তিযুদ্ধা, প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম জাফর আহমদের শোকসভা ঘিরে ৯নং মীরসরাই ইউনিয়ন ও পৌরসভা আওয়ামী লীগে বিরোধ দৃশ্যমান হলো। অভিযোগ উঠেছে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সস্তা জনপ্রিয়তা নিতে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল আলম দিদার দুইজনের মনগড়া সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ও স্বেচ্ছাচারিতার।
গতকাল ২৫ অক্টোবর রোববার বিকালে মীরসরাই পৌরসভা আওয়ামী লীগ ও মীরসরাই সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সুফিয়া রোড নুরজাহান ক্লাবে এই শোক সভা ও দোয়া মাহফিল সম্পন্ন হয়।
মীরসরাই সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামছুল আলম দিদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, মীরসরাই পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন সুজনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলতাপ হোসেন, পৌর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল আলম, মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জামশেদ আলম, মীরসরাই সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শরিফ, মুক্তিযুদ্ধা জাফর আহমদের নাতি জিসান প্রমুখ।
এই শোক সভায় দৃশ্যমান হয় মীরসরাই পৌরসভা ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভাজন। পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর উদ্দিন ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে দেখা যায়নি উক্ত অনুষ্ঠানে। উপজেলা আওয়ামী লীগে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৮/১০ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে শুধুমাত্র দফতর সম্পাদক আলতাফ ও সদস্য সুজন ছাড়া আর কেউ উপস্থিত হননি। তাছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র কোন নেতাকেও দেখা যায়নি। ফলে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র প্রধান অতিথি ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সভাপতিত্ব করেছেন।
দিনভর এসব নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন শুরু হতে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সস্তা জনপ্রিয়তা নিতে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল আলম দিদার দুইজনে মিলে কৃতিত্ব কুড়াতে তড়িঘড়ি করে মনগড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে এ আয়োজন করেছেন।
এ বিষয়ে পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর উদ্দিন এর মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন অনুষ্ঠানের পূর্বদিন সন্ধ্যায় সকল আয়োজন সম্পন্ন করে সভাপতি আমাকে বলেছেন ইউনিয়ন ও পৌরসভা আওয়ামী লীগ যৌথ আয়োজনে ২৫ তারিখ শোক সভা করবেন। তখন আমি বললাম এত তাড়াহুড়ো করে না করে পৌরসভা আওয়ামী লীগ স্বাতন্ত্রিক ভাবেই জাফর ভাইয়ের শোক সভা করতে পারি। অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
মীরসরাই সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে সভাপতি পৌর আওয়ামী লীগ সহ যৌথ উদ্যোগে শোক সভা করার কথা বললে আমি তাৎক্ষণিক উনাকে বলি, জাফর ভাই এই ইউনিয়নের দুই দফা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ উনার জন্য যৌথ নয় এককভাবেই শোকসভা ও দোয়া মাহফিল করা অত্যাবশ্যক। অপরদিকে আমাকে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহোদয়কে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর ভাই জসিম সাহেব অনুরোধ করেছেন আওয়ামী লীগ থেকে শোক সভা না করে উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদ যে শোকসভা করবেন তাতে যেন সকলে অংশগ্রহণ করি। তাই সভাপতির এমন প্রস্তাবে আমি কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে পড়ি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহোদয়ের পরামর্শ চাই।তিনিও মরহুমের পরিবারের বিষয়টি আমাকে বলেছেন এবং এমন করা অনুচিত বলেছেন। তাই আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহোদয়ের নির্দেশনা ও মরহুমের পরিবারের অনুরোধকে শ্রদ্ধা জানিয়ে উক্ত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করিনি। তিনি আরও বলেন এমন কর্মকান্ড রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।
পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুজনকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।ফেসবুক ম্যাশেঞ্জারেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল।