[english_date] | [bangla_day]

আজ পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৩ বছর

আজ পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৩ বছর

মোহাম্মদ হাসানঃ দীর্ঘ সশস্ত্র লড়াইয়ের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বাহিনীর সাথে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রীতি ও সৌহার্দের পরিবেশের জন্যই ২৩ বছর আগে আজকের এই দিনে সংঘাতময় পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্পাদিত হয়েছিল শান্তিচুক্তি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত শান্তি পাহাড়ে আজও অধরা। প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়ি জনপদ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বাহিনীর সাথে বাংলাদেশ সরকারের শান্তিচুক্তি সই হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। চুক্তি সইয়ের ২৩ বছর পূর্তি আজ। এটি ছিলো বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ২৩ বছরপূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য এলাকার অধিবাসীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এড. মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আজ বুধবার পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৩ বছরপূর্তি উপলক্ষে আজ এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে পার্বত্য জেলাসমূহের দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটে।

সূচিত হয় শান্তির পথচলা। পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অঞ্চল। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। শান্তিচুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবকাঠামোসহ আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে।

পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে রাষ্ট্রপতি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

এদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৩ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে আশা প্রকাশ করে বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম-অংশীদার। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো তৃতীয়পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করে পার্বত্য জেলাগুলোর নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে আজ পার্বত্য জেলাগুলো কোনো পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়।

পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম আধুনিকতার ছোঁয়া বিবর্জিত পশ্চাৎপদ পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন। পার্বত্যবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি নেন। আঞ্চলিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের সম-সুযোগের ব্যবস্থা নেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের জুন মাসে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ পরবর্তী অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বাঙালি-পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। খুন, অত্যাচার-অবিচার, ভূমি জবরদখল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এ অঞ্চলকে আরো অস্থিতিশীল করে তোলে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারও ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ঐতিহাসিক এই শান্তি চুক্তির চরম বিরোধিতা করে পার্বত্য অঞ্চলকে পুনরায় অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। তাদের এ হীন উদ্দেশ্য সফল হয়নি।

বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজার ৮৯০টি পরিবারের মধ্যে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন, চার হাজার পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে এ অঞ্চলের নারী ও শিশুদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য টেকসই সামাজিক সেবা, ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্যবাসীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে প্রায় দুই একর জমির ওপর ১৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি শৈল্পিক ও নান্দনিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিচুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করেছি। এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা রাঙামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। ভূমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বোর্ডের কার্যক্রম আরো গতিশীল ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়