মুহাম্মদ রুশনী মোবারক
পটিয়া প্রতিনিধিঃ-
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) চট্টগ্রাম মহানগর ও বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি’র এর উদ্যোগে, দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ে, চট্রগ্রাম দক্ষিণ জেলা ন্যাপ এর সাবেক সভাপতি প্রয়াত এডভোকেট চন্দ্র শেখর নাথের স্মরণসভার আয়োজন করা হয়, উক্ত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর ন্যাপের যুগ্ম আহ্বায়ক বাপন দাশগুপ্ত, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জনাব আলী নেওয়াজ খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ন্যাপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা ন্যাপের সভাপতি আশীষ কুমার শীল, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট অনুপম নাথ, চট্টগ্রাম মহানগর ন্যাপের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়েজ উল্লাহ মজুমদার, গাজী আলমগীর কবির, আবদুস সোবহান, তিলক চৌধুরী, মকবুল আহমদ, জাকের হোসেন, অপু দাশ, ছাত্র সমিতির নেত্রী তমা চৌধুরী, স্বরুপ দে, নয়ন ধর প্রমুখ এবং সঞ্চলনায় ছিলেন ন্যাপ নেতা সুভাষ আইচ।
সভায় প্রয়াত নেতা এড. চন্দ্র শেখর নাথের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে প্রধান অতিথি বলেন তিনি একজন নির্লোভ দেশপ্রেমিক মানুষ, সমাজ সংস্কারক, মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সারাটি জীবন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ন্যাপের সাবেক সভাপতি ও
পটিয়া যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবি প্রয়াত চন্দ্র শেখর নাথের সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ-
এডভোকেট চন্দ্র শেখর নাথ চট্টগ্রাম জেলার সাবেক
মহকুমা পটিয়ার, চন্দনাইশ থানার অন্তর্গত বরমা গ্রামে ২৭ শে অক্টোবর ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি শৈশবকাল অর্থাৎ শিক্ষাজীবন শুরু করেন বরমা ত্রাহি মেনকা বিদ্যাপীঠ হইতে সেখানে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্তায় তিনি নিজের লেখা পড়ার ব্যয়ভার ছাত্র পড়ানোর (টিউশন) মাধ্যমে নিজেই নির্বাহ করতেন। তৎকালীন সময়ে মেট্রিকুলেশন পাস করার পর উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হন এবং খুব ভোরে পায়ে হেঁটে চন্দনাইশ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে প্রতিদিন বোয়ালখালী আশুতোষ কলেজে যাতায়াত করতেন। সফলতার সহিত উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন শাস্ত্রে
স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন, সফল ভাবে স্নাতকোক্তর সম্পন্ন করেন। স্বাধীনতার পূর্বেই ১৯৬৭ ইং বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনায় নিজেকে নিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে কধুরখীল জলিল আম্বিয়া কলেজ, নোয়াপাড়া ডিগ্রী কলেজ, রাউজান কলেজ এবং সর্বশেষে পটিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেন। পটিয়া কলেজে অধ্যাপনা করা কালীন সময়ে উনার পিতার আগ্রহে এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে পটিয়া কলেজ হইতে পদত্যাগ করে পটিয়া যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ আদলতে নিজেকে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি তৎকালীন সময়ের সেরা আইনজীবি জনাব জলিল এর নিকট জুনিয়র হিসেবে যোগ দেন। এডভোকেট জনাব জলিল তৎকালীন ন্যাপ মোজাফফর এর অধীনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার পার্টি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তৎপ্রেক্ষিতে উনার জুনিয়ার এডভোকেট চন্দ্র শেখর নাথও ন্যাপের নীতি আর্দশের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে জনাব মোজাফফরের পার্টিতে যোগদান করেন এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামে পার্টির জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতেন। তিনি বিগত ২০০৮ ইং সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ১১ (পটিয়া) আসন হতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং যথেষ্ট জনসমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন। তিনি বহু শিক্ষাবৃত্তি, সামাজিক সংগঠনের সহিত যুক্ত ছিলেন।তিনি পটিয়ায় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ মেধাবৃত্তি চালু করেন প্রতি বৎসর গরীব অসহায় মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের উক্ত বৃত্তির মাধ্যমে অনুদান প্রদান করা হয়। উক্ত বৃত্তি প্রাপ্তীর মাধ্যমে শত শত ছেলে মেয়ে শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করছেন।
এছাড়া তিনি হিন্দু ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অসহায় গরীব কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাদের জন্য বিবাহ বৃত্তি চালু করেন, এই বিবাহ বৃত্তির মাধ্যমে অনেক কন্যার সুন্দর ভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে এবং সুখে শান্তিতে সংসার করছে। সর্বস্তরের মানুষের আর্শীবাদে তিনি আছেন সকলের হৃদয়ে। উনার হাতে গড়া বিভিন্ন বৃত্তি কার্যক্রম গুলি এখন এড.অনুপম নাথের দেখভালের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
নিজ মেধা গুনে দক্ষতায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে তথা চট্টগ্রাম জেলায় একজন স্বনামধন্য আইনজীবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্টা করেন। তিনি পটিয়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্টান, মন্দির ও বরমা স্কুলে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। বরমা কলেজেরও পরিচালনা পর্ষদের সম্মানীত সদস্য ছিলেন।
পার্টি প্রধান জনাব মোজাফফর আহমদ ও আমিনা আহমদ চট্টগ্রাম আসলেই পটিয়াস্থ উনার বাড়িতে উঠতেন এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনসভা পটিয়া থেকেই শুরু করতেন। জনাব মোজাফফর আহমদ এডভোকেট চন্দ্রশেখর নাথ কে খুবই স্নেহ এবং ভালবাসতেন। তৎ স্ত্রী নোয়াপাড়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিজয় লক্ষ্মী দেবী, বড় সন্তান ইতালি প্রবাসী, মেজ সন্তান আইনজীবি ও অধ্যক্ষ পটিয়া আইন কলেজ, ছোট কন্যা সন্তান ডাক্তার। তিনি গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ইং সালে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
বিশিষ্ট আইনজীবি চন্দ্র শেখর নাথ এর হাতেগড়া চেম্বার পটিয়া আদালাত পাড়ায় এখনাে সবচেয়ে বড়, যার কলেবর বিশাল, পটিয়ার আইনজ্ঞনের জন্য এড. চন্দ্র শেখর নাথের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি কিন্তু উনার সুযোগ্য সন্তান ও যোগ্যতম উত্তরসূরী পটিয়া আইন কলেজের অধ্যক্ষ, মেধাবী আইনজীবি অনুপম নাথ ও পটিয়া যুগ্ন জেলা জজ আদালতের সাবেক সাধারন সম্পাদক, চৌকশ আইনজীবি দেবেশ গুপ্তের যৌথ সুনিপুণ পরিচালনার কারনে সে ক্ষতিটা দ্রুততার সহিত কাটিয়ে উঠে বিচার প্রার্থীদের আইনী পরামর্শ সহযোগীতা করে সার্বিক ভাবে সমাধান করে চলেছেন অবিরত।
এড. চন্দ্র শেখর নাথের শিষ্য বর্তমানে ব্যক্তিগত চেম্বার করছেন পটিয়া ও চট্রগ্রাম আদালতে এমন অনেকেই আছেন তার মধ্যে এড.জমিউর আলম , নিজের প্র্যাকটিকেল আইনের গুরু সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন – আইনের গুরু সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন – আইনের খুঁটিনাটি সব কিছুই আমি প্রায়ত এড.চন্দ্র শেখর নাথের কাছ থেকে শিখেছে। তিনি
শিক্ষানবীশদের প্রতি খুবি আন্তরিক ছিলেন, শিক্ষানবীশ আইনজীবিদের যথেষ্ট স্নেহ করতেন। আমাদের হাতে কলমে কাজ শিখেছেন। উনি সব সময় নীতি’তে অটল থাকতেন।
একই চেম্বারের শিক্ষানবীশ আইনজীবি ইয়াসিন মিয়া’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন – আইন সম্পর্কে উনার পরিধি বিশাল, উনার দেখানো পথে সততা, দক্ষতা, ন্যায় আমি নিজে রপ্ত করার চেষ্টায় আছি অবিরত।