[english_date] | [bangla_day]

চট্টগ্রামে করোনাকালে মন্দিরে বিয়ের হিড়িক

চিটাগাং মেইল : করোনার ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে গত ১৯ মার্চ থেকে নগরের হোটেল, ক্লাব ও কমিউনিটি সেন্টারে সকল প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে সনাতন সম্প্রদায়ের বেশ কিছু বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের বুকিং বাতিল করতে হয় কর্তৃপক্ষকে।এ অবস্থায় মন্দিরভিত্তিক বিয়ের হিড়িক পড়ে গেছে চট্টগ্রামে।

জানা গেছে, লগ্ন অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে হাতেগোণা কয়েকটি বিয়ে হলেও আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তা বেড়ে যায়। প্রতি লগ্নে অর্ধশতাধিক বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নগর ও উপজেলার মন্দিরগুলোতে। এতে কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার যেমন অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনি ধর্মীয় বিধিবিধানও রক্ষা করা যাচ্ছে বলে অভিমত পণ্ডিত সমাজের।

নগরের চট্টেশ্বরী কালী মন্দির, গোলপাহাড় কালী বাড়ি, চাকতাই লোকনাথ ধাম, পাথরঘাটা দুর্গা মন্দির, ষোলশহর কালী বাড়ি, ফিরিঙ্গিবাজার নিত্যানন্দ ধাম, সৎসঙ্গ আশ্রম, গোসাইলডাঙ্গা কালী বাড়ি, কাঠগড় কালী বাড়ি, কাতালগঞ্জ করুণাময়ী কালী বাড়ি, চকবাজার নরসিংহ আখেড়া, মোহরা জ্বালাকুমারী মন্দির, চৌধুরীহাট রাধাকৃষ্ণ জিও মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি মন্দিরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। পাশাপাশি বিয়েতে আসা অতিথিদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন তারা।

পঞ্জিকামতে, আষাঢ় মাসে ৬টি লগ্নে মন্দিরে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া চলতি শ্রাবণ মাসেও ৯টি লগ্ন রয়েছে। এ মাসের প্রথম লগ্ন শুক্রবার (২৪ জুলাই) নগরের কয়েকটি মন্দিরে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জ্যৈষ্ঠ মাসেও ৬টি লগ্নে বিয়ে সম্পন্ন হয় মন্দিরে।

দেওয়ানজী পুকুর পাড় শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক লায়ন শংকর সেনগুপ্ত বলেন, করোনাকালে এই মন্দিরে ১০টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। মন্দির ভবনের কয়েকটি ফ্লোরে লগ্ন থাকাকালীন সময়ে একদিনে ৩-৪টি বিয়ের আয়োজনও করা হয়। পাত্রীপক্ষ মাত্র ২০ হাজার টাকা মন্দিরের প্রণামী দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারছেন। মন্দির কমিটির সহায়তায় নিরামিষ রান্না ও পরিবেশন করা হচ্ছে।

চাকতাই লোকনাথ ধাম পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি আশুতোষ সরকার বলেন, করোনার কারণে শুরুতে বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হলেও গত ১৪ জুলাই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুনরায় এ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে বৈশাখ মাসে লোকনাথ ধামে ১৫টি বিয়ে সম্পন্ন হয়। চলতি মাসের লগ্নেও বিয়ের অনুষ্ঠান রয়েছে। ৬ হাজার টাকা প্রণামী দিয়ে পাত্রী পক্ষ বিয়ের আয়োজন করছেন। লোকনাথ ধামের রন্ধনশালায় অতিথি ভোজনের জন্য নিরামিষ রান্না করা হয়। এই অঙ্গনে ইসকনের কয়েকজন কৃষ্ণভক্তের বিয়েও পরিচালনা পরিষদের সহযোগীতায় সম্পন্ন হয়েছে।

গোলপাহাড় কালী বাড়ি পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল দে বলেন, গত ২ জুলাই থেকে পুনরায় কালী বাড়িতে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৫ হাজার টাকা প্রণামীতে এ পর্যন্ত ১০টি বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। বিয়ের আয়োজনের আগে পাত্র-পাত্রীর বয়সের প্রমাণপত্র দেখেই অনুমতি দেওয়া হয়। করোনার এই সময়ে ৮-১০ জনের বেশি জনসমাগম না করার নির্দেশনা, ঢোল না বাজিয়ে শুধু উলুধ্বনি দেওয়ার ব্যাপারেও পাত্র-পাত্রী পক্ষকে আগে অবহিত করা হয়। এছাড়া গরীবদের জন্য শাখা-সিঁদুর, মায়ের শাড়ি পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। নেওয়া হয় না প্রণামী।

গণবিবাহের আয়োজনে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হয় কি না-এমন প্রশ্নে চট্টেশ্বরী কালী মন্দিরের সেবায়েত বিজয় চক্রবর্তী বলেন, এই মন্দিরটিকেই মূলত দরিদ্র সনাতন জনগোষ্ঠী বিয়ের উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেন। এখানে ৮ জন সেবায়েত মায়ের পূজার পাশাপাশি পাত্র-পাত্রীর মালাবদলের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। শুধু লগ্নের সময় নয়, অন্যান্য সময়গুলোতেও পরিবারের বিশেষ প্রয়োজনে এখানে বিয়ের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। এখানকার সেবায়েত-পুরোহিতরা এ ব্যাপারে সবাইকে প্রতিনিয়ত সচেতন করছেন। সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানে উভয়পক্ষের লোকজন ছাড়া মন্দিরে আসা দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। এই ভিড় কমাতে দায়িত্ব পালন করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। মালাবদলের এই আয়োজন ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়। কেউ ৩-৪ হাজার টাকা প্রণামী দেয়, আবার কেউ দেয় নামমাত্র প্রণামী। সব বিয়ের তথ্যই মন্দিরের রেজিস্ট্রি খাতায় লিপিবদ্ধ থাকে।

দেওয়ানজী পুকুর পাড় সৎসঙ্গ মন্দিরে বিয়ের আয়োজক লায়ন তপন কান্তি দাশ বলেন, আগামী ৩ আগস্ট কন্যা ডা. পূর্বাশা দাশের সঙ্গে রাউজানের ডা. প্রীতম নন্দীর বিয়ে এই মন্দিরেই অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এমন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পেরে আমরা উভয়পক্ষই খুশি।

বাংলাদেশ লোকনাথ ব্রহ্মচারী সেবক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত বলেন, করোনার এই সময়ে জেলার মন্দির ও রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, সীতাকুণ্ডসহ উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে দুই শতাধিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এটা সনাতনীদের মঙ্গলজনক। লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন না করে মন্দিরে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হলে আর্থিকভাবে কনেপক্ষ লাভবান হবেন।

মন্দিরভিত্তিক বিবাহ প্রকল্পের উদ্যোক্তা অ্যাডভোকেট তপন কান্তি দাশ বলেন, আমার দুই সন্তান ডা. কথক দাশ ও ব্যবসায়ী প্রমিত দাশের বিয়ের আয়োজন মন্দিরেই করেছিলাম। তখন করোনাকাল ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে সনাতনী নিয়ম মেনে মন্দিরে বিয়ের আয়োজন করার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। এখন করোনার এই দুঃসময়ে মন্দিরে বিয়ের হিড়িক পড়েছে। এটা সুসংবাদ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রয়োজনে বিয়ে পরবর্তী অনুষ্ঠান পাত্র-পাত্রীপক্ষ কমিউনিটি সেন্টারে করতে পারেন, তবে বিয়েটা যেন সাত্ত্বিকভাবে মন্দিরেই হয়-সেটাই আমার প্রত্যাশা।

হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপূর ও ফেনী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাস্টি উত্তম কুমার শর্মা বাংলানিউজকে বলেন, এই ধারা করোনাকাল শেষ হলেও অব্যাহত রাখতে হবে। এতে বিশাল অঙ্কের অর্থের অপচয় রোধ হবে। বাঁচবেন কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্দিরের প্রাত্যহিক ব্যয়ের খরচও যোগান হবে।

সুত্র: বাংলানিউজ।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়