[english_date] | [bangla_day]

মামুন সুলতান’ র গুচ্ছ কবিতা উড়ে যাচ্ছে বেদনার পাণ্ডুলিপি

অস্থির বাতাসে ওড়ে বন্দি বালিকার শ্বাস
কাশ্মীরে বন্দি বোনের বেদনাসিক্ত দুঃখপালক
এই দ্যাখো শেকল নীতি
গ্রিলের ভেতর থেকে তাকিয়ে আছে দুটি চোখ
দ্যাখো কতো অসহায় চোখের বিষণ্ণ বিতান
তার দৃষ্টি বহুদূরে উড়ন্ত ঈগল হয়ে উড়ছে।

ঈশ্বরকে সব বলেছে সিরিয়ান শিশুর সেই আর্তি
বাতাসের গতিতে উড়ছে পৃথিবীর অভিশাপ

জেরুজালেমে দেখেছি বোমায় বিক্ষত রক্তগোলাপ
রক্তের বুদ্বুদ হয়ে ঝুলছে বাতাসের ঘূর্ণনে
প্রকৃতি বিদ্যায় পড়ি প্রশ্বাস প্রণালি
ধূলোয় আন্ধার হয়ে উড়ে যাচ্ছে বিষাক্ত বিজ্ঞান

বিষণ্ণ পিতার কোলে শেষ নিঃশ্বাসে বলে যাচ্ছে
বাতাসের গায়ে লিখছে কষ্টকরুণ মহাকাব্য
পৃথিবীর পৃষ্ঠা জুড়ে অঙ্কিত লালগোলাপের রঙ
দ্যাখো ওই বেদনারা ভর করেছে বাতাসে
বেদনার পাণ্ডুলিপি ঘুরে ঘুরে মুছড়ে দিচ্ছে
পৃথিবীর যাবতীয় আবাসভূমি-
দ্যাখো দ্যাখো উড়ে যাচ্ছে বেদনার পাণ্ডুলিপি।
২২-০৫-২০২০

২-
ভাব বিলাসী দুঃখ

একটানা বৃষ্টির মতো ঝরছে বিন্দু বিন্দু হৃদয়রেণু
ভাবনার বেণুকা বনে বিক্ষত হচ্ছে মনের পাপড়ি
ভেঙেচুরে নাশ হচ্ছে লতানো ভাববৃক্ষ
একে কি দুঃখ বলবে নাকি দুঃখবিলাস?

দুর্দিনে দুঃখ কেমন? কী তার গায়ের রঙ?
সুখেরা তখন কেমনে হাঁটে বহুতল ঘরে?

নিশ্চল গভীর জলে ডুবে যায় ভাবনাতরি
দম আটকে গেলে বুঝি তার আর্তনাদ!
ডুবেছি অতি গহীনে অনাসৃষ্টির অথর্ব জলে
এটাও কি দুঃখ নাকি কষ্টের কখানা বড়ইকাঁটা?

থাক এসব শুনে লাভ নেই
বরং তুমি হেসে উঠো সৃষ্টির ঝর্ণাধারায়
ভাবের লতানো গাছে একটু জল দাও
আমি তরতর করে বেয়ে উঠি আকাশলীনায়।
২২-০৫-২০২০

৩-
সব ঘর পৃথিবী এখন

ঘাসের মাদুরে হেঁটে গোবর পোকা ভাবে
শিশির ডোবানো ঘাসে গড়ে তার পৃথিবী
তিনকক্ষের এই ঘরে ঘুরে ঘুরে ভাবি
পৃথিবী শুয়েছে আজ কক্ষবাদী ঘরে।

পৃথিবী মাড়িয়ে মন খুঁজেছিলো পৃথিবীর পথ
হাজার দুয়ারে ঘুরে তবুও উদাস ছিলো চোখ
সাগর নাভীতে চড়ে চলে গেছি পাহাড় চূড়ায়
সব শখ বেঁধে আজ ঘরে আছি কুনোব্যাঙ।

চোখের বেলাজ ধনু ধুয়েছিলো রমণীর বুক
ঠোঁটের হাসি রাঙিয়ে ঘুরতে আসা লাস্যলাবণী
তারে দেখে কতবার কিনে নিতাম কামের হেঁসেল
আর পারি না এখন আহা কই সোনালি সময়?

মনের সব আহ্লাদ চাপা দিয়ে চোখ বুজে রই
চোখের সিনান নেই শখের ঘুরবেলা নেই
উদাস উদরে খুলি পৃথিবীর চোখ
গৃহকোণে মজি আজ মজাইল সুপারি যেমন।
১৬-০৫-২০২০

৪-
পরিচয়

আমি হতে পারতাম বিশালাক্ষী নদীর উচ্ছল ঢেউ
কীর্তিনাশার যৌবনে গুৎখাওয়া মস্তঘূর্ণন
যমুনার ঘোলা বুকে চঞ্চল পাহাড়ী পানিপালোয়ান
ভাসিয়ে নিতাম চর বসন্ত বিহারির বাড়ি।

ও রহিমা ও সখিনা করিম চাচা কই
নদীর মতো হইনি চাচা মানুষ হয়ে রই
নদীর যত উচ্ছলতা বুকটা তেমন বড়
আফিয়া আমার ফুলজননী বাবা খেতের জনক
দুঃখবিকেল সঙ্গ করে সুখরজনী হাসি।
০৮-০৫-২০২০

৫-
যদি মরে যাই

যদি খবর পাও আমি নেই
শেষরাতে শেষ নিশ্বাস ছেড়ে
বিদায় নেয় যদি আমার প্রাণ
যদি জেনে যাও
এই উপত্যকায় আমি আর নেই
তখন হে বন্ধু আমার জন্য জায়নামাজে বসে যেও
দুরাকাত নামাজ বকসে দিয়ো আমার আত্মায়

দিন রাত কত কথা বলেছি
হাসি গানে প্রেমে অপ্রেমে মিশেছি তোমার আড্ডায়
কত আচানক ভাবনায় বুনেছি দুনিয়ার জামা
সব ছেড়ে যদি আজ চলে যাই
কথার অবসরে নিশ্চুপ হলে
আমায় মনে রেখো তোমার মোনাজাত বেলায়

যদি কখনো আর দেখা না হয়
কথা না হয়
আমোদবেলা যদি আর ফিরে না আসে
যদি শুনো আমার প্রাণ উড়ে গেছে
কেঁদে কেঁদে অভিশাপ দিয়ো না বন্ধু
যদি পারো ক্ষমার জন্য প্রার্থনায় বসে যেয়ো

কত মনের কত কথা বলেছি আমার কবিতায়
শ্রমিকের সুঠাম শরীর গেঁথে দিয়েছি তাতে
প্রেমিকের বেদনায় নীল হয়েছে শব্দাকাশ
নারীর অধিকার দিয়েছি তুলে মিছিলের শ্লোগানে
আপন বেদনায় ব্যথিত করেছি কবিতার হৃদয়
সব ছেড়ে যদি আজ চলে যাই
স্মরণে রেখো আমায় তোমাদের স্মরণসভায়।
১২-০৫-২০২০
সিলেট

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়