ডেক্স রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান “রিউমার স্ক্যানার” কতৃক পরিচালিত এক অনুসন্ধানে জানা যায়, অনলাইনে প্রচারিত একটি ভিডিওকে ফেইক বা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেছে সংস্থাটি। ভারতে প্রচারিত ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছিল যে, সম্প্রতি বাংলাদেশে একজন নারীকে ধর্ষণ করে তার জিভ কেটে ফেলা হয়েছে।যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই ঘটনা বাংলাদেশে নয়, বরং ভারতে ঘটেছে।
সোমবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাটি জানায়, সম্প্রতি রাস্তায় গুরুতর আহত অবস্থায় এক নারীকে বসে থাকতে দেখা যায় এবং লোকজন তাকে প্রশ্ন করছেন- এমন একটি ভিডিও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রচারণায় দাবি করা হয়েছে, ওই নারী একজন পর্যটক এবং তাকে টেকনাফে গণধর্ষণ বা কুমিল্লায় রাস্তায় পেটানো হয়েছে এবং তার ঠোঁট ও জিভ কেটে ফেলা হয়েছে। আরও দাবি করা হয়েছে, তাকে ধর্ষণ করে জিভ কেটে দেওয়া হয়েছে, যাতে তিনি কিছু বলতে না পারেন।
তদন্তে জানা যায়, যখন ওই আহত নারীকে তার বাড়ির অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন একজন ব্যক্তি তার অস্পষ্ট উত্তরের প্রেক্ষিতে মুর্শিদাবাদের কথা উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা।
এই তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কীওয়ার্ড দিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ ১৮’-এর ওয়েবসাইটে ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ‘জয়নগরের ধানক্ষেতের পাশে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার, পুলিশ তদন্ত করছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০ জানুয়ারি রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জয়নগরে বকুলতলা থানার অন্তর্গত রথতলা এলাকায় একটি ধানক্ষেতের পাশে ইটের রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় এক নারীকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই নারীর শরীরে গুলির আঘাত ছিল, তার মুখের এক পাশ থেঁতলানো ছিল এবং কয়েকটি দাঁত ভাঙা ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার একই ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করেছে।
আরও অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২৪ জানুয়ারি ‘ভিশন ১৮ বাংলা’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘জয়নগরের খবর : বকুুলতলায় ধানক্ষেতের পাশে রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার, পুলিশ তদন্ত করছে’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিওটির বিষয়বস্তু এবং চারপাশের পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ ভিডিওটির সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।
এছাড়া, ‘নিউজ ১৮’-এর ইউটিউব চ্যানেলে ২৫ জানুয়ারি ‘জয়নগরের খবর : জয়নগরের নারী হত্যার অভিযুক্ত এখনও গ্রেফতার হয়নি, বকুলতলায় এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা!’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতেও একই ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি, ভারতীয় ফেসবুক ব্যবহারকারী রেখা পাত্রার একটি পোস্টে ওই নারীর ভিডিও পাওয়া গেছে এবং পোস্টের ক্যাপশনও নিশ্চিত করে যে ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের।
উপরের তথ্য থেকে এটি নিশ্চিত করা যায় যে সংশ্লিষ্ট ভিডিওটির ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেনি।
সুতরাং সম্প্রতি ভারতের একটি ঘটনার ভিডিও বাংলাদেশে ঘটেছে দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে একজন নারীকে ধর্ষণ করে তার জিভ কেটে ফেলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে রিউমার স্ক্যানার নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যেমনটা ছিল নতুন সরকারের আমলে এতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষত ভারতীয় মেইনস্ট্রিম মিডিয়া থেকে সোস্যাল মিডিয়া সব খানেই গুজবের ছড়াছড়ি।
মৃত গরুর ছবি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা ছবিটি ২০২৩ সালের: রিউমর স্ক্যানার
‘ডক্টর ইউনূস এক দুর্বৃত্তের নাম, সে মানুষকে তো হত্যা করছেই, পশুকেও নিষ্ঠুর নির্যাতন করে হত্যা করতে ছাড়ছে না’ শীর্ষক একটি মৃত গরুর ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গরু হত্যার ঘটনা ও ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং ২০২৩ সালের পুরোনো একটি ঘটনার ছবি দিয়ে এমন দাবি করে প্রচার চালিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আবুল হাসানাত নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ৩ জুলাইয়ের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে মৃত গরুর একই ছবি যুক্ত থাকতে দেখা যায়৷
ওই পোস্টের সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২ জুলাই দিবাগত রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমণী মোহন ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে গরু হত্যার ঘটনাটি ঘটে৷ গরুটি করাতিরহাট এলাকার দুদু মিয়া সর্দারের ছিল। পেটে বাছুর থাকা জীবন্ত গাভিকে কুপিয়ে পার্শ্ববর্তী বাদশা মোল্লার বাড়ির পাশে রেখে যাওয়া হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ আখতার আলমের ফেসবুক পোস্ট থেকেও এ বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে আখতার আলম জানান, তিনি এই পোস্ট করার পর পশুর প্রতি পাশবিকতার ঘটনাস্থল চররমণী মোহন ইউনিয়নের করাতির হাট এলাকা পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ও লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা)। তখন পুলিশ সুপার এলাকাবাসীর বক্তব্য শোনেন।
অর্থাৎ, মৃত গরুর এই দৃশ্য বর্তমান সরকারের সময়ের নয়, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ের।
সুতরাং, ২০২৩ সালের পুরোনো ছবি ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে গরু হত্যার দৃশ্য বলে দাবি করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর উপস্থিতি নিয়েও ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর সঠিন নয়: রিউমার স্ক্যানার
সূত্র: বাসস