বিনোদন প্রতিবেদক: ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক থাকলেও শুরুটা মসৃন ছিলো না। পারিবারিক সাপোর্ট না থাকায় স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই ছিলো নিজের প্রতিভা বিকাশের জায়গা। এরপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও সুযোগের অভাবে অভিনয়-টা করা হয়নি।কিন্তু সময় ও সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকেন ছেলেটি। বলছিলাম নিজের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ খুঁজতে থাকা কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আলভির কথা।
স্বপ্ন ছিলো অভিনয় দিয়েই দর্শক হৃদয় জয় করবেন আর নিজের মতো করে গল্প বলার জন্য ভালো কোন গুরুর সানিদ্ধে থেকে নির্মাণের কাজ শিখবেন। তারপর অভিনয়ের পাশাপাশি করবেন নির্মাণ। কিন্তু স্বপ্ন পূরণে বাধ সাধে পারিপার্শিক অবস্থা। কারণ, পরিবার চায়-না ছেলে অভিনয় করুক আর এলাকায় তেমন কোন সুযোগ নেই।
তারপরও স্বপ্নবাজরা কি থেমে থাকতে পারে? নিজের স্বপ্ন পূরণের উদ্দ্যেশে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে থাকে আব্দুল্লাহ আলভি। ইউটিউব কে স্কুল ভেবে নিয়ে দেখতে থাকে বিভিন্ন নাটক। রপ্ত করতে থাকে অভিনয়। আর সুযোগ খুঁজতে থাকে সুন্দর সময়ের। বিভিন্ন সময়ে ফেইসবুকে বিভিন্ন নির্মাতার সাথে যোগাযোগ করে নিজের অভিনয়ের আগ্রহের কথা জানান। কিন্তু, বিধিবাম! ঢাকায় অডিশনের ডাক পড়লে পারিবারিক বাধার কারণে যাওয়া হয়নি তার। আবারও মন ভাঙ্গলো আলভির। তবে দমে যায়নি সে। মন শক্ত করে নিয়মিতই কোন না কোন নির্মাতার সাথে যোগাযোগ করেই চলেছেন একটু সুযোগের অপেক্ষায়।
তার ইচ্ছের পুরোটা জুড়েই ছিল শুধু অভিনয় আর নির্মাণ। অবশেষে সে ডাকও এলো,এ বুঝি স্বপ্ন পুরণের পালা। ২০২৩ সালে ফেইসবুকের সুবাধে পরিচয় হলো নির্মাতা এস.ডি.জীবন এর সাথে।অভিনয়ে আগ্রহের কথা জানাতেই তাকে আমন্ত্রন জানান পরিচালক এস.ডি.জীবন।চট্টগ্রামে এসে নির্মাতা এস.ডি.জীবনের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান “জীবন প্রিয়া মিডিয়ার” অধীনে পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল “জীবন প্রিয়া ডিজিটাল” এ নাটকে কাজের সুযোগ পান আব্দুল্লা আলভি। মুহূর্তেই বনে গেলেন অভিনেতা। অভিনয়ে কোথাও কোন তালিম না নেয়া ছেলেটা যেকোন চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে অনায়াসেই। তার প্রতিভা দেখে তাকে নিয়মিত কাজে সুযোগ দিতে থাকেন নির্মাতা এস.ডি.জীবন।
আব্দুল্লাহ আলভী বলেন, ‘অভিনয়টাই আমার মেইন ফোকাস ছিল, সাথে নির্মাণ, এখনও তাই। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাকে প্রথম দেখাতেই সুযোগ দেয়ার জন্য আমার গুরুজী নির্মাতা ও সাংবাদিক এস.ডি.জীবন ও আমার প্রিয় প্রিয়া সেন দিদির প্রতি। নিজের ছোট ভাইয়ের মতোই দুজন আমাকে ভালোবেসে কাজ শেখান। ভুল হলে ধরিয়ে দেন। আমি যেহেতু বিভিন্ন পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করেও সুযোগ পাইনি সেহেতু এস.ডি.জীবন দাদার দেয়া সুযোগ টা পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত।এটা আমার জন্য বিশাল কিছু। মিডিয়াতে আসলে কাউকে কেউ সুযোগ দিতে চায়না,এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যাত্ক্রিম দেখলাম “জীবন প্রিয়া ডিজিটাল” এর এস.ডি.জীবন দাদা ও প্রিয়া সেন দিদিকে। তারা বলেন,”কেউই মায়ের পেঠ থেকে শিখে আসে না, আমরা যদি নতুনদের সুযোগ না দিই তাহলে তো তারা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ-ই পাবে না”। নতুনদের জন্য “জীবন প্রিয়া ডিজিটাল” এর দরজা সবসময় খোলা বলেও মন্তব্য করেন জীবন দাদা ও প্রিয়া দিদি।
ছোট ছোট নাটকে নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আব্দুল্লাহ আলভি। ২০২৩ সালে আলভি’র অভিনীত ৪০ কন্টেন্ট “জীবন প্রিয়া ডিজিটাল” ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে। বেশিরভাগ কন্টেন্টই মানুষের পছন্দ হয় এবং সবগুলোর মোট ভিউ হয় ১ কোটি ১৫ লাখ। আলভি’র বিশেষ দক্ষতা সে নিজেকে যেকোনো চরিত্রে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাসিন্দা হলেও আলভি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষায় পারদর্শী।
“জীবন প্রিয়া ডিজিটাল” “কমেডি ডিজিটাল” ও “বলাকা মিডিয়া”র ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আলভি’র অভিনীত কন্টেন্ট নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। আলভি’র স্বপ্ন অভিনয় দিয়েই দর্শক হৃদয় জয় করা।
অভিনেতা মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী ও মুশফিক আর ফারহানের অভিনয় সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আব্দুল্লাহ আলভি’র। সুযোগ পেলেই তাদের কাজ দেখেন অভিনয় শেখার চেষ্টা করেন। তবে তাদের কারো মতোই হতে চান না, নিজের একটা আলাদা স্বকীয়তা তৈরি করতে চান আলভি।
২০০২ সালের ১লা মার্চ চট্টগ্রামের ষোলশহরে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল্লাহ আলভি। চট্টগ্রাম,সন্দ্বীপ ও কক্সবাজারের ঈদগড় মিলে আলভির বেড়ে উঠা। বাবা মোঃ জাবেদ প্রবাসী আর খামারী মা রুবি আক্তারের দুই ছেলের মধ্যে আলভি বড়। বর্তমানে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের মোহাম্মদ শরিফ পাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন আব্দুল্লাহ আলভি।