[english_date] | [bangla_day]

নগরীতে ৩০ জুনের মধ্যে সরছে খালের বাঁধ: পলিথিন বন্ধে শুরু হবে অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার চলমান মেগা প্রকল্পের পুরোপুরি কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাগরিক দুভোর্গ কমানোর লক্ষ্যে খালে থাকা সকল বাঁধ চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের টাইগার পাসস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে নগরীর জলবদ্ধতা নিরসনে সকল সেবা সংস্থার সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীল মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এম. রেজাউল করিম চৌধুরী।

সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, নগরীতে চলমান জলবদ্ধতা মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে আশা করা যায়। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনো খালে অস্থায়ী বাঁধ আছে। চউক কর্তৃপক্ষ তা সরাচ্ছে। তবে জলাবদ্ধতা যাতে এবারের বর্ষায় নাগরিক দুর্ভোগ না বাড়ায় তা নিয়ে সব সংস্থার সুচিন্তিত মতামত প্রয়োজন।

YouTube player

মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করতে হবে সব সংস্থাকে। না হয় প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ দেয়া মেগা প্রকল্পের টাকার অপচয় হবে, যা কাম্য নয়। মেয়র নগরীর জলবদ্ধতার জন্য কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং না হওয়া, নদী খালে পলিথিন ফেলাকে দায়ি করেন।

তিনি পলিথিন উৎপাদন বন্ধে চসিকের উদ্যোগে অভিযান শুরুরও ঘোষণা দেন। মেয়র আর.এস ও সি.এস শীট অনুযায়ী নতুন খাল খননের পাশাপাশি বিলীন এবং দখল হওয়া খাল পুনঃরুদ্ধারে উদ্যোগ নেয়ার পক্ষে মত দেন। তিনি চলমান মেগা প্রকল্পের কর্মকর্তাদের স্থানীয় কাউন্সিলরগণদের মতামত ও তাদের সাথে কাজ পরিচালনা করতে বলেন।

চউক কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আমরা সব সেবাসংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করতে চাই। একে অপরকে দোষারোপ করলে কাজ হবেনা। খালে কাজের জন্য যে বাঁধ দেয়া হয়েছে তা চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে অপসারণ হবে। সেনাবাহিনীকে তিনি এ ব্যাপারে বলে দেবেন বলে জানান।

সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ২০১৬ সালের মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা নেয়ার ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের মতামত না নেয়া হলে এখনই তা নেয়ার আহ্বান জানান। না হয় জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

চউক কর্তৃপক্ষের চলমান জলাবদ্ধতা নিরসর মেগা প্রকল্পের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনসট্রাকশন ব্রিগেডের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর পঙ্কজ মল্লিক বলেন, বার বার সব সংবাদ মাধ্যমে মেগা প্রকল্প বলা হলেও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে চউক কর্তৃপক্ষ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে ৩ হাজার ৮ শত ৪০ কোটি টাকায় এর মধ্যে আমরা পেয়েছি ১ হাজার ৬ শত ৮২ কোটি টাকা। ৩৬ টি খালের মধ্যে আমরা অর্ধেক খালের কাজ করেছি। বাকি অর্ধেক খালের কাজ এখনো বাকি। ড্রেনের কাজ করেছি মাত্র ২৬ কিলোমিটার কাজেই এখনি বেশি কিছু আশা করলে ভুল হবে।

চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ২০১৬ এর ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হয়নি বলেই নগরীতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর সচিত্র প্রতিবেদনে কর্পোরেশনের করা জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্পন্ন হওয়া ড্রেনের কাজ ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এতে কর্পোরেশন ১ হাজার ৬ শত ৭৪ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করেছে বলে উঠে আসে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ হাজার ৬ শত ২০ কোটি টাকার কাজ করেছে বলে জানা যায়। তিনি নগরীতে ১৩ খালের সাথে সমুদ্রের সংযোগ ও ১০ টি খালের সাথে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ রয়েছে বলে জানান।

কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী খাল খননের পাশাপাশি খালের দুই পাড়ে ২০ ফুটের রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করেন। যাতে খাল খননের পর খালের মাটি সহজে অপসারণ করা যায়। তিনি নগরীতে নতুন সড়ক সৃষ্টির প্রস্তাবও করেন।

YouTube player

চউক কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জলবদ্ধতা নিরসনে নির্মাণাধীন জলকপাটের রক্ষণাবেক্ষণে চসিককে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দেন। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শও নেয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন জলকপাট নির্মাণে আমরা এখনো ৬০ কোটি টাকার মধ্যে ৪০ কোটি টাকা পেয়েছি। আর জলকপাট নির্মাণের পর যেহেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চসিকের তাই আমরা যাবতীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে পারি। এ ব্যাপারে সিডিএ, কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা যায়। সভায় নির্বিঘ্নে খাল খননের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও জমি অধিগ্রহণে সব সেবাসংস্থা একমত পোষণ করেন।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম. জহিরুল আলম দোভাষ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চসিক প্রধান কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. নুরুল্লাহ নুরী, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কর্মকর্তা এস.এম মোস্তাইন হোসেন, চউক জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর পঙ্কজ মল্লিক, সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর প্রমুখ।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়