[english_date] | [bangla_day]

রিয়াজ মোরশেদ সায়েম’র গুচ্ছ কবিতা

শহরটা ভালো নেই

কেয়ারীর যে সিঁড়িতে বসে আড্ডা দিতাম, পাথরটি নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে,
চকবাজারের যে টং-এ বসে মেতে উঠতাম হাসি-ঠাট্টায় জায়গাটি পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়
কারা যেন সব লুট করেছে!
ভাঙা কাপের টুকরো অংশের ফুঁপিয়ে কান্না যেন আটকে আছে!
ওয়ার সেমিট্রির কবরগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে, ওরা আবার কবর খুঁড়ছে
শত শত লাশ এনে জমা রেখেছে!
স্টেডিয়ামের বাতিগুলো সাদা কাফন পরে আছে
টাইগারপাসের টাইগারগুলোর মাথা ঠুকরে খাচ্ছে শকুন
টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের মাঝে
যেন আর পদচিহ্ন না ভাসে কোন মানুষের!
মুত্যুর প্রহর গুনছে গির্জার ঘন্টা!
ঢং, ঢং, ঢং,
মিছিল, মৃত্যুর!
মসজিদের আওয়াজে ভেসে আসে
নতুন মৃত্যুর সংবাদ
অনেকগুলো চাপা স্বর যেন গুনগুন করে উঠে!
ফ্লাইওভারের উঁচু জায়গায় দাঁড়ালে চোখে পড়ে-
কিছু মৃত উঠ হোহো করে হেসে চলছে বাঁচার জন্য
ভেতরে বন্দী কিছু পানি গড়াগড়ি খেয়ে পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সাথে!
ঠিক পয়তাল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম পার্কের পাশে
দূর দূর বলে তাড়িয়ে দিল পার্কের প্রতিটি পাতা, বেয়ে উঠা লতা!
এমন পরিস্থিতির জন্য আমাকে দোষারপ করে অভিমান করে মুখ ফিরিয়ে নিল,
ফিসফিস করে বলে গেল- মরণ আমার কাম্য!
গলিগুলোয় আমার চলার পুরোনো দিন দেখতে পেলাম
আমার হাতের স্পর্শ, ল্যাম্পপোস্টের গায়ে হেলান দেওয়া,
তাদের চেহারায় আমার প্রতি জন্ম নেওয়া ঘৃণার পাহাড় দেখে বুঝলাম
শহরটা ভালো নেই-
কোলাহল শহরে একটা তসবিহ জপে উঠে শুধু
মৃত্যু, মৃত্যু, মৃত্যু!
আলিঙ্গন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রতিটি যানবাহন,
নিজেকে সঁপে দিতে চাইছে প্রত্যেক চাকুরীজীবি
অমিয় সুধা পান করতে চায় অনাহারে ক্লিষ্ট হওয়া মানুষগুলো,
এসব অনিয়ম বুকে নিয়ে ফিরতেই বুঝলাম
শহরটা ভালো নেই!
ভয় পেয়ে তাই হাসপাতালে গিয়ে দেখিনি
তাদের ভালো না থাকার দৃশ্য!

২.
জোঁক

কবিকে তোদের ঘেন্না লাগে মুখ ফিরিয়ে নাও
কবির বদন দেখলে নাকি চোখ রাঙিয়ে চাও?
বালের সুশীল, বালের কবি, হাতে আঙুল গুনো
কবির কথায় ঠাট্টা করো, শোন তাহলে শোন!
তোমরা কবির ধোনের কাছে বালের সমান ছাল
তোদের কথায় কখনো কবি হাল ছাড়েনি, হাল!
প্রেমের পুরুষ, নষ্ট ব্যাটা, যত ইচ্ছে গালি
বলতে দেখে তৃপ্ত হয়, হাতে কষে তালি।
সস্তা কবির ফালতু লেখা ছিড়ে ক্ষান্ত তুমি
কবিকে শালার কুত্তা ডাকো, রানা-মাসুদ-রুমি!
পাছে কত্ত আদর দাও শখে কিংবা রাগে
এবার থেকে সামনে বসবা, হাঁটু গেড়ে আগে!

তাতেই পরম শান্তি পাবে, খুশি কবির বুক
কবির লেখার পিছন ছেড়ে, কবির পায়ে ঠুক!

৩.
হে প্রিয়া

তুমি সব বুঝেও অভিমান করো,
সব জানো, তবুও চুপিসারে মুখ লুকাও
অভিমানের সব খাতায় আমার নাম ঠুকে দাও
কিন্তু আমি তোমার নাম রেখেছি অভিমান!
তুমি যখন মুখ লুকাও-
তখন আমি ভালোবাসার মানুষটিকে দেখি
ব্রিজের মাঝে দাঁড়িয়ে চিঠি লিখবো তোমার ঠিকানায়
প্রিয় অভিমান-
তোমার জন্য জমানো অক্সিজেন দিয়ে ফুলিয়ে নিয়েছি কিছু বেলুন
সেগুলোর পায়ে বেঁধে দিয়েছি এ চিঠি খানা,
তুমি ওপাশে গিয়ে চিঠিটা ঠিক যখন পড়বে
প্রতিটি অক্ষরেরে জন্য ধ্বসে যাবে অভিমানের পাহাড়,
আর শেষে ইতি বলে টাঙানো থাকবে
ভালোবাসার অভিমান।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়