[english_date] | [bangla_day]

সারাদেশে কতিপয় ধর্ষক, আমরা নীরব দর্শক! মুহাম্মদ রুশনী মোবারক (গণমাধ্যম কর্মী )

দেশে গত ৯ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন নারী। যা গড়ে প্রতিদিনের হিসেবে দাঁড়ায় ৩ জনেরও বেশি। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন। আর আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। এতে উদ্বেগ জানিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা ও নারীর প্রতি মর্যাদা না থাকায় একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
গত ০১ অক্টোবর ২০২০ ইং গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটি আরো জানায়, গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানরি কারণে ১২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন।
অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতে বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও নারীবান্ধব করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে নারীর নিরাপত্তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরাও।
আসক জানায়, এ সময়কালে দেশে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, শিশু
নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।।আসক আরো জানায়, গত ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী।

এছাড়া স্বামীর গৃহ থেকে আইনী প্রক্রিয়ায় তালাক বিহীন বিতাড়িত হয়েছেন ১২ নারী। এ সময়ের মধ্যে ১১ জন গৃহকর্মী হত্যার শিকার হন এবং ৩২ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২ জন। এছাড়া এ সময়কালে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ নারী। শিশু নির্যাতন ও হত্যার গত ৯ মাসের পরিসংখ্যানও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময়কালে ১০৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকারসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। এছাড়া ৬২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের মত জঘন্য ঘটনাও ঘটেছে।
বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে আসক জানায়, গত ৯ মাসে প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও তথাকথিত ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ২১৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হন ১৮৫ জন। এ সময়কালে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা যান ২৭ জন। এই ৯ মাসে দেশের কারাগারগুলোতে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা যান ৫৮ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৪ জন এবং হাজতি ৩৪ জন। গত ৯ মাসে দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের শিকার হন ৪ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ১ জন। এ সময়কালে গণপিটুনির ঘটনায় মারা গেছেন মোট ৩০ জন।

সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণ কিংবা অসুস্থ স্বামীর জন্য রক্ত খুঁজতে গিয়ে রাজধানীর মিরপুরে ধর্ষণের শিকার স্ত্রী, আবার রাজশাহীতে গির্জায় তিন দিন আটকে রেখে ফাদার কর্তৃক স্কুলছাত্রী ধর্ষণ, নোয়াখালী বেগমগঞ্জে স্বামী পরিত্যক্তা গৃহিনীকে গণধর্ষণ পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাতেই এমন শিরোনাম পাঠকের জন্য এখন নিত্যদিনের। দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত কোথাও থেমে নেই অপরাধীদের এমন জঘন্য অপরাধ। সমাজব্যবস্থায় যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইতোমধ্যেই। উদ্বিগ্ন সমাজ তথা প্রতিটি পরিবার।

এদের মধ্যে অনেকেই অপমান, লাঞ্চনা বঞ্চনা, লোকলজ্জার ভয়ে আইনের দ্বারস্থ হন না। যারাও মামলার প্রক্রিয়ায় যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই বিচারের আশায় দিন কাটাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরেই। এমন অবস্থায় আইন ও সালিসকেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা বলেন, সর্বোচ্চ কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াটাই শক্তিশালী হয়নি এত বছরেও। ফলে নিয়ন্ত্রণ নেই ধর্ষণের মত অপরাধের।

পরিবার, সমাজে নারীর প্রতি মর্যাদাহীনতাই বাড়ছে একের পর এক ধর্ষণের মতো ঘটনা। নারীর নিরাপত্তায় রাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকা জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীরা। তারা বলেন নারীর ক্ষমতায়নের সূচকে আমরা অনেক ওপরে উঠে গেছি। কিন্তু সামাজিক জায়গাগুলোতে নারীকে অজস্র নাগরিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাকে মর্যাদা দিচ্ছি না।
পুলিশ সদর দপ্তরের উর্ধতণ কর্মকর্তাদের মতে, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। এ বিষয়ে সামাজিক শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানো বেশি জরুরি।
সূত্র বলছে, শতকরা ৯৭ ভাগ ভুক্তভোগী, লোকলজ্জা কিংবা অপরাধীদের ভয়ভীতি অথবা বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে আইনের আশ্রয় নেয় না। ধর্ষণের শিকার মাত্র ৩ ভাগ নারী আশ্রয় নেন আইনের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাইরালের কারনে অনেক গুলি ঘটনা সকলের কাছে দৃষ্টিগোচর হয়, অনেক নোংরা ঘটনা অগোচরেই থেকে যাই! আমাদের সমাজ ব্যবস্তা, পরিবার, সন্তান এবং নিজেদের নিরাপদে রাখার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে সকলকে সামাজিক ভাবে প্রতিহত করতে হবে ,অন্যায়কারীর শাস্তি প্রাপ্তী’তে বাধা বিহীন ভাবে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়