[english_date] | [bangla_day]

খুঁৎ: কাব্য-নির্মিতির সংহত লক্ষণ —— মুঈরাদ ছিদ্দিকী

সাহিত্য নামের যে-জ্ঞানবৃক্ষটি মানবিক চেতনাকে স্ফটিক করেছে, চিন্তনের চিরায়ত ভাণ্ডারের মুখোমুখি করেছে, তৎমধ্যে কবিতা হল সবচেয়ে মৌলিক এবং সৃষ্টিশীল। কবি যদি লেখনীর অভিষেকপর্ব সমৃদ্ধ ও বহুমাত্রিক বয়ানের মাধ্যমে এগোনোর সংকল্পে অটুট থাকেন, তবে সেই লেখক সৃষ্টির পরবর্তী ধাপগুলো সফলতার সাথে উতরাতে পারবেন। অর্থাৎ, কবিতার ক্যারিকেচার বুনে, কাব্যের একটা পূর্ণ ধারণা নিয়ে লেখক জীবন শুরু মানে সংহত যাত্রায় বিনিয়োগ। তাকে আর কবিতার গ্রামার সম্পর্কে, লেখকের মার্জিন সম্পর্কে, উৎকর্ষের অভিঘাত সম্পর্কে, এগোনোর প্যারাডাইম সম্পর্কে কারো কাছ থেকে জ্ঞান বা আইডিয়া ভিক্ষা করতে হবে না। নিজ-নিজ আগানোর একটা বড় পরিসর সে নিজেই খুঁজে নিতে পারবে। কবিতায় অভিজ্ঞতা লেখক-জীবনের দক্ষ ড্রাইভিং-এর মত।

সাহিত্যিক জ্ঞানকাণ্ডে কাব্যের বুননকে আমরা যে-ভাবেই সাজাই না কেন, যে-ভাবেই অনুভব করি না কেন, বৈকৃত সময়কে তির্যকভাবে রূপায়ণ করতে, বিস্রস্ত ঘটনাকে সুনিপুণভাবে উপস্থাপনে কবিতার অবদান অনস্বীকার্য। স্বকালের সাথে অকালের ভেদরেখা টানতে, বিচূর্নীত সময়ের খণ্ডদর্শনকে জানান দিতে কবিতা হতে পারে নির্লেপ মাধ্যম। এখনকার সময়ে কবিদের পাঠ-বিমুখতার যে-বুজরুকী ভাবনা আমাদের গ্রাস করে রেখেছে, কবিরা জ্ঞানার্জনের নিরলস প্রচেষ্টা থেকে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে, তার বৈভাষিকতা থেকে বেরিয়ে আসার স্পর্ধা যদি আমরা না রাখি, তাহলে ঘটনার নিরাবয়ব অনুধ্যান, আন্ত:সত্যের পরিক্ষীত প্রপঞ্চকে উপস্থাপনের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। নি:সন্দিগ্ধ অভিরুচি গঠনের মোক্ষ থেকে পিছিয়ে পড়তে হবে।

শিল্পচেতনার শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে হৃদয়তন্ত্রবীণাকে ছন্দের শিহরণে জাগাতে হলে, অন্তর্দীপণকে পুলকবোধে উদ্দীপিত করতে হলে, মূর্ত সময়কে বিমূর্ততায় বিভাসিত করতে হলে কবিতার নৈয়ায়িক প্রক্ষেপ এবং দুর্দান্ততার জারকরস আহরণ জরুরী। কবি প্রদীপ প্রোজ্জ্বল তার বয়সী প্রক্ষেপে প্রকাশিত কাব্য-গ্রন্থে মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন নান্দনিক উপস্থাপনার দারুণ নৈকষ্যে, বৈকৃত ঘটনা বিবরণের প্রক্ষোভে, অমানবিক কর্মকাণ্ডকে অবলোকনের সংক্ষোভে এবং প্রাত্যহিক ঘটেচলা চারপাশের অধিপতি শ্রেণির বেপরোয়া ও নজিরবিহীন বেদনা বিমক্ষণে। প্রকাশিত কবিতার প্রতিটি পঙতিতে চৈতনিক নিরাশার এবসার্ডিটি, কবিতার তথাকথিত স্যাটায়ারকে ভেঙে নাতুনিক ডেকাডেন্সের দীপ্ততা ছড়িয়েছে, একজন সৃষ্টিশীল কবির জন্য এটি বুদ্ধিদীপ্ত উদ্ভাসন এবং বাঙনির্মিতির সংহত লক্ষণ।

কবি প্রদীপ প্রোজ্জ্বল তার এগানা অভিজ্ঞতার দিলঘেঁষা প্যাটার্ণগুলোতে মায়াজাল বুনে, জটিল প্রশ্নকে সমতলে এনে, জীবনের নানা ‘ম্যাক্রো’ এবং ‘মাইক্রোকে’ দূরবীণ দিয়ে দেখে, প্রগতির বুদ্ধিভাসা রাজনীতির তত্ত্বকে চষেবেড়িয়ে তার অনুসন্ধানের নয়া-নয়া বাহানা নিয়ে হাজির হয়েছেন। তার কবিতায় আধিপত্য ভাঙার ফেনোমেনা, বিউপনিবেশিক সাবজেক্টের হাইব্রিডনেস এবং এথনোগ্রাফির ডায়াসপোরার বর্গ ভেঙে নতুন একটি ভাষাচিত্র পেখম মেলে দিয়েছে। তিনি ক্ষমতা এবং ক্ষমতায়নের অধিপতিশীল এপ্রোচগুলোকে চিহ্নিত করে তার মার্জিনকে কিভাবে নস্যাৎ করা যায় সেই সব জ্ঞানভাষ্যের পষ্টাপষ্টি উচ্চারণ করেছেন।

আমরা তার বইটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করি।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়