[english_date] | [bangla_day]

দেশীয় শিল্পে সুবিধা অর্থনীতিকে বেগবান করবে: মাহবুবুল আলম

চিটাগাং মেইল: বাজেটে করপোরেট কর হ্রাস ও দেশীয় শিল্পকে সুবিধা দেওয়ায় অর্থনীতিকে বেগবান এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে চেম্বারের পরিচালকদের পক্ষ থেকে সভাপতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাজেটে মোট ব্যয় ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, মোট আয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী। কৃষি খাতে ৪৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা এবং যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৫৯ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ইতিবাচক।

তবে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

ব্যক্তিগত করদাতাদের ব্যবসায়িক টার্নওভার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ, নন-পাবলিকলি কোম্পানির ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আয় না থাকলে সম্পদের ওপর সারচার্জ পরিশোধের বিধান বাতিল করা হয়েছে এবং ন্যূনতম সারচার্জ বিলুপ্ত করা হয়েছে, যা প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, তবে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি, আমরা এ সীমা বাড়ানোর দাবি জানাই।

আমদানি পর্যায়ে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামালের অগ্রীম কর ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ এবং সিমেন্ট এবং লৌহ জাতীয় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ নির্ধারণ করায় নির্মাণ শিল্প এবং রফতানি উপকৃত হবে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষ্যে মেগা শিল্প উৎপাদনে এবং হোম এ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে ২০ ও ১০ বছরের কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ভবনের অবচয় ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, কারখানা ভবনের অবচয় ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০শতাংশ করা হয়েছে যা ইতিবাচক।

আইটি হার্ডওয়্যার উৎপাদনে ১০ বছরের কর অব্যাহতি, এসএমই খাত ও নারী উন্নয়নে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার করমুক্ত রাখা, বাংলাদেশে অটোমোবাইল, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার উৎপাদনে এবং হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিকে কর অব্যাহতি প্রদান দেশীয় শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে আমরা মনে করি। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানকে ১০ কর অব্যাহতি প্রদান শিল্পায়নে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কাঁচামাল/উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রীম কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে যা শিল্পায়নকে উৎসাহিত করবে।

YouTube player

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে এ বিমানবন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। তবে বে-টার্মিনাল নির্মাণে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা এবং চলমান মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান চেম্বার সভাপতি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণসহ দ্রুতগতির ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের দাবি জানান তিনি। ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণের পরিবর্তে সমপরিমাণ এবং বকেয়া ভ্যাটের সুদহার বার্ষিক ২৪ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ করা ভ্যাটদাতাদের উৎসাহিত করবে।

কৃষি খাতে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শূন্য শুল্ক হার অব্যাহত রাখা এবং রেয়াতি শুল্ক হারে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি সুবিধা সম্প্রসারণ, অন্যান্য নিত্যসামগ্রী আমদানিতে প্রযোজ্য শিল্প করহার স্থিতিশীল অবস্থা রাখা, কৃষি উপকরণ আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে কর হ্রাস এ খাতের প্রসারে ভূমিকা রাখবে। ফল, শাকসবজি, দুগ্ধজাত পণ্য ও শিশুখাদ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতি প্রশংসনীয়।

বাজেটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার বাইরে ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল বা ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ১০ বছর কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে যা স্বাস্থ্যসেবা প্রসারে কাজ করবে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে সারা দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দের আবেদন জানাই।

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে সরাসরি এ সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার জন বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান করোনাজনিত পরিস্থিতিতে এসব পদক্ষেপ পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে জীবনধারণে সহায়তা করবে।

বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাসে দেশীয়ভাবে গৃহস্থালি পণ্য যেমন: ব্লেন্ডার, জুসার, মিকচার, গ্রাইন্ডার, কেটলি, রাইচ কুকার, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন ইত্যাদি উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবে।

সড়কে নসিমন, লেগুনা ইত্যাদি দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহন নিরুৎসাহিত করতে বিকল্প হিসেবে মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। এছাড়া ডাম্পার/ট্রিপার সিকেডি আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস এবং মোটর সাইকেল উৎপাদনকারী/সংযোজনকারী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে সুবিধা প্রদান দেশীয় এসব শিল্প সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়