[english_date] | [bangla_day]

কৃপনতা নয় সংসার জীবনে মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হওয়ার কতিপয় উপায় –

 

মুহাম্মদ রুশনী মোবারক
(সাংবাদিক ও কলামিস্ট)

দৈনন্দিন জীবনে চাহিদা দিন দিন বাড়ছেই। কিছুতেই রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না সংসার খরচের। আয়ের তুলনায় ব্যয়ের বিস্তর তফাৎ! তাই মাস শেষে ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেকেই! কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই আপনি আপনার প্রতি মাসের খরচ যেমন কমিয়ে আনতে পারেন, তেমনি পারেন সেই টাকা থেকে কিছুটা আপনার ভবিষ্যতের জন্যে সঞ্চয় করতেও !

কিভাবে সংসারের খরচ কমানো যায় তেমনই ১৫টি টিপস নিচে তুলে ধরা হলো।

১)ঋণ শোধ করুনঃ
পারতপক্ষে ঋণ না করাই ভালো, কারন ঋণ করলে সেটা কিছু মানুষের অভ্যাসে পরিনত হয় তখন তা নিয়ে সামাজিক ভাবে লজ্জিত হতে হয়! তাও যদি একদম অপারগ হয়ে ঋণ করতেই হয় তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই সবার আগে আপনার ঋণ শোধ করতে চেষ্টা করুন। পুরোটা না পারলেও যতটা সম্ভব করুন। ঋণ শোধ না করে সঞ্চয়ের পথে বা ভুলেও পা বাড়াতে যাবেন না।

২)প্রতিদিন কিছু না কিছু জমানঃ
প্রতিদিনই চেষ্টা করুন কিছু না কিছু টাকা জমাতে। হতে পারে সেটা ১০-১০০ টাকা। ঘরের কোন একটা বাক্সে জমা করুন, যাই হোক না কেন জমান। এবং সেটার কথা ভুলে যান। ভুলেও সেটায় হাত দেবেন না।

৩)সন্তানকে সঞ্চয় করতে শেখানঃ
সন্তানকে ছোট্ট একটা ব্যাঙ্ক কিনে দিন। মাটির বা প্লাস্টিকের। খুব রঙ্গিন বা আকর্ষনীয় পুতুল আকারের ব্যাঙ্ক কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোর একটা কিনুন ও তাকে টাকা জমাতে সাহায্য করুন।

৪)কিছু কেনার আগে ভাবুনঃ
আমাদের অনেকেরই অভ্যাস হল রাস্তায় যেতে যেতে কোন দোকানে কিছু পছন্দ হলে হুট করে কিনে ফেলা। এটা করার ফলে বেশীরভাগ সময়েই আমরা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে ঘর বোঝাই করে ফেলি। জিনিস পছন্দ হয়ে গেলেই হুট করে কিনে না ফেলে একটু ভেবে নিন। দরকার হলে ১/২ দিন পরে কিনুন।

৫) শপিং এ যাবার আগে লিস্ট করুনঃ
শপিং এ যাবার আগে লিস্ট করুন। জামা কাপড় কেনার আগে দেখে নিন আপনার কি কি আছে এবং কি কি আসলেই কেনা বেশি প্রয়োজন।

৬)লক্ষ্য ঠিক করুনঃ
ভবিষ্যতে আপনার বিগ বাজেটের কি কি কিনতে হবে সেটার একটা তালিকা করে সময়সীমাও নির্ধারণ করুন। যেমন, ৫ বছর পর ফ্ল্যাট, ৭ বছর পর গ্রামে জমি, ১৫ পর বছর গাড়ি, ১ বছর পর টিভি আর এক মাস পর ওভেন, ৩ মাস পর ফ্রিজ, সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য জমা করা, ২৫ বছর পর হজ্ব করা এভাবে ঠিক করে কত টাকা করে জমালে এই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব, সেটি খেয়াল রাখুন ও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।

৭)বাজেট করুনঃ
একটি বাজেট করুণ এক বছরের। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসুন। সবার মতামত নিন। এতে পরবর্তীতে জটিলতা তৈরি হবে না। প্রয়োজনীয় চাহিদার পাশাপাশি অবশ্যই রাখবেন সঞ্চয়ের খাত আর সেই সাথে জরুরী প্রয়োজনের জন্যে আলাদা একটা বরাদ্দ রাখুন। বছর শেষে ওই টাকাটা বেঁচে গেলে সেটি রেখে দিন সেভিংসে।

৮) খরচের হিসেব রাখুনঃ
প্রতিদিন কোথায় কত খরচ হল তার হিসেব একটা খাতায় লিখে রাখুন। মাস শেষে সেটি নিয়ে বসুন। এবার দেখুন কোন কোন খাতে খরচ বেশী হয়েছে এবং সেগুলো একটু চেষ্টা করলেই কমানো সম্ভব কিনা!

৯) বাইরে খাওয়ার প্রবণতা কমানঃ
শহর জীবনে বাইরে খাওয়ার প্রবণতা আমাদের অনেকের মাঝেই লক্ষ্য করা যায়। এলাকায় নতুন রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে বলেই যে সেখানে সবাই মিলে খেতে যেতে হবে এমন প্রবণতা কমিয়ে আনা দরকার। প্রতি সপ্তাহে বাইরে খাবার অভ্যাসটা কমিয়ে তিন থেকে ছয় একবারে নিয়ে আসুন। মাস শেষে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন দেখে, কি পরিমান টাকা আপনি বাঁচাতে পেরেছেন!

১০) ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমানঃ
ক্রেডিট কার্ডটা যতটা সম্ভব বাসায়ই ইচ্ছে করেই ভুল করে রেখে শপিং এ যান। ক্যাশ ব্যবহার করুন। এতে চাইলেও আপনি যথেচ্ছ টাকা খরচ করতে পারবেন না। দেখবেন এভাবে আপনার অনেক টাকা বেঁচে গেছে।

১১) ব্র্যান্ডিং প্রবণতা ত্যাগ করুনঃ
বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে অযথা ব্র্যান্ডিং প্রবণতায় ভুগবেন না। আপনাকে ভালো মানায় এমন পোশাক বা এক্সেসরিজ ব্যবহার করুন। এভাবেও কিন্তু আপনি ট্রেন্ডি হয়ে উঠতে পারেন। অযথা দাম দিয়ে ব্র্যান্ড এর পোশাক সব সময় পরার চেয়ে কিছু ব্র্যান্ডেড পোশাক কিনে যত্ন করে রাখুন বিশেষ উপলক্ষে, অফিসিয়াল উন্নত প্রোগরামে পরার জন্যে। এতে আপনার অর্থ ও স্ট্যাটাস দুটোই রক্ষা পাবে।

১২) সেভিংস স্কীম খুলুনঃ
ব্যাঙ্কে সেভিংস স্কীম অবশ্যই খুলে ফেলুন। মাসিক হারে যতটুকুই সম্ভব যেটা আপনি কোন রকম চাপ না নিয়ে জমাতে পারবেন এরকম হারে ৩-১০ বছর মেয়াদী সেভিংস একাউন্ট খুলুন। এতে আপনি কয়েক বছর পরে ভালো অংকের একটা টাকা জমিয়ে ফেলতে পারবেন।

১৩) ইনস্যুরেন্স করুনঃ
একটা ভালো কোম্পানিতে ইনস্যুরেন্স করে রাখুন। এতে কোন অনাকাঙ্কখিত দুর্ঘটনায় আপনার অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করতে পারবেন সহজেই। আর সেই সাথে টাকাটা তো জমলই!

১৪) মূল্য ছাড়ের সময় পণ্য কিনুনঃ
অবশ্যই পরিচিত হতে হবে এমন ভালো জুয়েলারি দোকান থেকে স্বর্নের অলংকার, গহনা বা অন্যান্য পণ্যের দামে বছরের বিশেষ কিছু সময়ে ছাড় দেয়া হয়। চেষ্টা করুন সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে পণ্যটি কেনার। এতে আপনার বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাবে, অহেতুক জামা কাপড় কেনার চাইতে অল্প অল্প স্বর্ণ কেনা ভালো কারন সেগুলি বিপদের সময় কাজে দেয়।

১৫) ঘরের পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করুনঃ
দরকার না হলে ঘরের পানির ট্যাপ, চুলা ও ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্রের লাইন অফ করে রাখুন। বিল কম আসবে, কোন অবস্তাতেই বিল বকেয়া রাখবেন না, যথাসময়ে পরিশোধ করে দেয়ার চেষ্টা করবেন।ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলে মোমের বদলে চার্জার লাইট ব্যবহার করুন। প্রথমবারের চেষ্টায় খরচ আশানুরূপ কমাতে না পারলে হাল ছেড়ে দেবেন না যেন!
খরচ কমানো খুব কঠিন কিছু নয়। আপনার একটু সদিচ্ছা আর সতর্কতা তৈরি হলেই ভালো ফলাফল পাবেন অাশা করি।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়