[english_date] | [bangla_day]

ইতালি প্রবাসীর টাকা ছিনতাই এর ঘটনায় র‍্যাবের অভিযানে অস্ত্র সহ ৩ ডাকাত গ্রেফতার!

মোহাম্মদ হাসানঃ সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ইতালি প্রবাসীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে টাকা ছিনতাই সংক্রান্তে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৩ সদস্যকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব -৪!

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গেলো ২৮ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ১০ঘটিকার সময় ইতালি প্রবাসী জনৈক মোঃ আমানুল্লাহ (৪০) সস্ত্রীক আমিনবাজারে একটি ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করে ভাড়ায় চলিত কারযোগে কেরানীগঞ্জের বাড়ি ফেরার পথে ভাকুর্তা লোহারব্রিজের কাছে পৌছালে পেছন থেকে অনুসরণ করে আসা ৩টি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারযোগে ডাকাতদল প্রকাশ্য দিনের আলোয় ১০.৪৫ ঘটিকার সময় উক্ত কারের গতিরোধ করে এলোপাথাড়ি গুলি করে এবং প্রবাসী আমানুল্লার স্ত্রীর হাতে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও মোবাইলসহ ভ্যানিটি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনতার সহযোগীতায় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমানুল্লাহকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং এ সংক্রান্তে সাভার মডেল থানায় প্রবাসীর স্ত্রী নিজে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি ডাকাতি মামলা রুজু করে।

ক্লুলেস এ ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ঘটনার দিন থেকেই মাঠে নামে র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল। ছায়া তদন্তের শুরুতেই ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ক্যাপ পরিহিত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন র‌্যাবের গোয়েন্দা দল এবং এরই সূত্র ধরে র‌্যাব-৪ গত ৬ নভেম্বর শুক্রবার রাত ১২:৩৫ ঘটিকায় প্রাইভেট কারযোগে পূঃন ডাকাতি প্রস্তুতি গ্রহণের সময় ১টি প্রাইভেট কার, ২টি বিদেশী পিস্তল, ১টি রিভলবার, ১২ রাউন্ড গুলি, ১টি ছুরি, ২টি লোহার পাইপ জব্দ ও লুন্ঠিত ৫০ হাজার টাকা উদ্ধারসহ সাভারের বিরুলিয়া জোড়া ব্রিজ এলাকা হতে ডাকাত দলের ৩ সদস্য ১। মোস্তাফিজুর রহমান (৩৮), জেলাঃ পটুয়াখালী ২। নাসির (৩৮), জেলাঃ বরিশাল ৩। আবদুল বারেক সিকদার (৪৫), জেলাঃ বরিশাল কে
গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও অপর ৬/৭ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।

র‍্যাব সূত্রে জানাযায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ছদ্মনাম নামধারী ১০-১২ জনের আন্তঃজেলা সশস্ত্র দুধর্ষ ডাকাত দলের সদস্য। তাদের এ দলকে তারা কোম্পানি বলে। প্রত্যেক সদস্যের একটি করে ছদ্মনাম থাকে। এ দলের অন্যতম সদস্য ব্যাংকে সেদিন ক্যাপ পরিহিত অবস্থায় ছিল এবং ব্যাংকের টাকা উত্তোলনকারীদের দিকে তীক্ষন নজর রেখে বাইরে মোটরসাইকেলে ওৎ পেতে থাকা নাসির (৩৮) সহ তার অন্যান্য সহযোগীদের’কে তথ্যটি জানায়। গ্রেফতারকৃত আসামী বারেক সিকদার (৪৫) মূলত ছিলেন ডাকাতদের অস্ত্র ও ছিনতাইকৃত টাকা বহন করার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট গাড়ির চালক। তার গাড়ীটি ডাকাতির কাজে অন্যান্য সহযোগীদের অস্ত্রসহ বহন করে আসছিলো। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় তারা ডাকাতির সময় নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন ও নাম্বার ব্যবহার করতো এবং ডাকাতি শেষে সেসব মোবাইল ফোন-সিম নষ্ট ও ব্যবহৃত জামা-কাপড় ফেলে দিতো। গ্রেফতারকৃত বেশিরভাগ আসামীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও হত্যা মামলা রয়েছে এবং সেসব মামলায় জামিন পেয়ে পুনরায় একই কর্মে লিপ্ত হয়। আরো জানা যায় সেদিনের লুন্ঠিত টাকা ১০ জনের মাঝে ৫০ হাজার করে বন্টন করে দেয়া হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা উক্ত ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করে।

এছাড়াও তাদেরকে আরো জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতিতে তাদের অভিনব কৌশল সম্পর্কে জানতে পেরেছেন র‍্যাব-৪।

র‍্যাব-৪ এর ফেসবুক পেইজের পোষ্টে এ কৌশল সম্পর্কে বলা হয়েছেে, বিভিন্ন ছদ্মনাম নামধারী ১০ সদস্যের আন্তঃজেলা ডাকাত দলের মূল হোতার রয়েছে ব্যক্তিগত/নিজস্ব সোর্স যাদের মূল কাজ হচ্ছে কে কখন ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করবে সে তথ্য সংগ্রহ দেয়া। সোর্স হতে তথ্য প্রাপ্তির পর ডাকাতির দিন ও সময় ধার্য্যপূর্বক পরিকল্পনা প্রনয়ণ ও প্রস্তুতি গ্রহন করে।

এধরনের কর্ম সংঘটনের ২/১ দিন আগেই সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও যানজট পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা এবং ডাকাতি সম্পন্ন করে পালিয়ে যাবার নিরাপদ পথ ঠিক করে তারা।

অপরদিকে তার এমন ঘটনা করার পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে নিজেদের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। কারো দায়িত্ব থাকে অস্ত্রসহ গাড়ি বহন করা, কারো দায়িত্ব থাকে ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলনের খবর বাহিরের সদস্যদের পাঠানো, আবার কারো দায়িত্ব থাকে মোটরসাইকেলযোগে হানা দেয়া। পালানোর সময় মোটরসাইকেলযোগে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মিলিত হয়ে টাকা ও অস্ত্রসহ এক সদস্য প্রাইভেট কারে উঠে এবং নিরাপদ পথ দিয়ে একসাথে সবাই বেরিয়ে যায়।

এরপর আসে লুন্ঠিত টাকা বা মালামাল ভাগাভাগি ও গা ঢাকা দেয়ার পালা। ডাকাতি শেষে এ দলের প্রতিটি সদস্য পূর্ব নির্ধারিত নির্জন স্থানে মিলিত হয় এবং সেখানেই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিম ও জামা-কাপড় নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তারা কয়েকদিনের জন্য গাঁ ঢাকা দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং কোনো এক সময় আবারো তাদের মূল হোতার নতুন পরিকল্পনা অনুসারে অন্য একটি জেলায় একইভাবে ডাকাতি কর্মকান্ড চালায়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইতালি প্রবাসীকে গুলি করে ছিনতাই ঘটনার মামলা ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও ডাকাতির প্রস্তুতি ধারায় পৃথক দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং এ ডাকাত চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র‌্যাবের সাড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়