[english_date] | [bangla_day]

বীরকন্যা বিপ্লবী নারী প্রীতিলতার আত্নাহুতি দিবস আজ

মুহাম্মদ রুশনী মোবারকক

কলাম লেখক, পটিয়া।

 

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (জন্ম:৫ মে, ১৯৯১চট্রগ্রামের পটিয়ায়, মৃত্যু:২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২), ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা প্রীতিলতা ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের পর  অভিযান ব্যার্থ হওয়ায় ধরা পরার পূর্বে পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী নারী বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্নাহুতি দিবসে বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধায় স্বরন করছি। প্রীতিলতার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনাতে মাস্টারদা লিখেছেন “তার চোখেমুখে একটা আনন্দের আভাস দেখলাম। এতদূর পথ হেঁটে এসেছে, এর জন্য তার চেহারায় ক্লান্তির কোন চিহ্নই লক্ষ্য করলামনা। যে আনন্দের আভা তার চোখে মুখে দেখলাম, তার মধ্যে আতিশয্য নেই, Fickleness নেই, Sincerity শ্রদ্ধার ভাব তার মধ্যে ফুটে উঠেছে। একজন উচ্চশিক্ষিত cultured lady একটি পর্ণকুটিরের মধ্যে আমার সামনে এসে আমাকে প্রণাম করে উঠে বিনীতভাবে আমার দিকে দাঁড়িয়ে রইলো। মাথায় হাত দিয়ে নীরবে তাকে আশীর্ব্বাদ করলাম”। প্রীতিলতাকে নিয়ে আলাপচারিতা প্রসঙ্গে বিপ্লবী কল্পনা দত্ত ১৯৩০ সালে লিখেছেন, “কথা হচ্ছিল, পাঁঠা কাটতে পারব কি না। আমি বলেছিলাম, ‘নিশ্চয় পারব, আমার মোটেই ভয় করে না’। প্রীতি উত্তর দিয়েছিল ‘ভয়ের প্রশ্ন না, কিন্তু আমি পারব না নিরীহ একটা জীবকে হত্যা করতে’।একজন তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করল ‘কী, দেশের স্বাধীনতার জন্যও তুমি অহিংস উপায়ে সংগ্রাম করতে চাও?’ আমার মনে পড়ে প্রীতির স্পষ্ট জবাব, ‘স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতেও পারব, প্রাণ নিতে মোটেই মায়া হবে না। কিন্তু নিরীহ জীব হত্যা করতে সত্যি মায়া হয়, পারব না।’ ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউরোপীয়ান ক্লাবে হামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন মাষ্টারদা। অভিযানে নেতৃত্বের ভার পড়ে একমাত্র নারী বিপ্লবী প্রীতিলতার উপর। বাকি ইতিহাস আমাদের সবারই জানা। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী সেদিনের আক্রমণে মিসেস সুলিভান নামে একজন নিহত হয় এবং চারজন পুরুষ এবং সাত জন মহিলা আহত হয়। মেয়েরা এগিয়ে না এলে যে অপূর্ণ থেকে যাবে মুক্তির আন্দোলন। সেই দৃষ্টান্তই তুলে ধরেছিলেন নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে। “মা, আমায় তুমি ক্ষমা করো—তোমায় বড় ব্যথা দিয়ে গেলাম। তোমাকে এতটুকু ব্যথা দিতেও তো চিরদিন আমার বুকে বেজেছে। তোমাকে দুঃখ দেওয়া আমার ইচ্ছা নয়। আমি স্বদেশ-জননীর চোখের জল মোছাবার জন্য বুকের রক্ত দিতে এসেছি। তুমি আমায় আশীর্বাদ কর, নইলে আমার মনোবাঞ্ছা পুর্ণ হবে না। মাগো, তুমি অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য-স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কি করবো মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী যে বিদেশীর অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভারে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না?” আত্মাহুতির আগের রাতে মায়ের উদ্দেশে প্রীতিলতার লেখা চিঠির কিছু অংশ।। তাঁর মৃত্যুবরণের পর মাষ্টারদা চিঠিটি প্রীতিলতার মায়ের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়