আবুল বশর পারভেজ
মহেশখালী প্রতিনিধিঃ
যাত্রীবাহী গাম বোটকে ফিশিং বোটের ধাক্কায় নির্মম ভাবে মৃত্যুর শিকার আশরাফুল মোহাম্মদ তোফাইল এর সহকর্মী বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহেশখালী টু কক্সবাজারে সেতু ও ফেরী সার্ভির চালুর দাবীতে মানববন্ধন ও মিছিলে উত্তাল মহেশখালী দ্বীপ।
আজ ২৩সেপ্টেম্বর-২০ইং সকাল ১১টায় মহেশখালীর এসএসসি-১৬ ব্যাচ এর বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মহেশখালী ঘাটের অনিয়ম ও অ-ব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে মানববন্ধন পরবর্তী বিশাল মিছিল সহকারে মহেশখালী ইউএনও অফিসের সম্মুখে মিলিত হয়।
মিছিল নিয়ে আগত প্রতিবাদি ছাত্রদেরকে মহেশখালীর ইউএনও তাদের দাবির প্রতি সর্মথন জানিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ হতে কয়েক জন ছাত্র নেতাদের নিয়ে দাবীর পক্ষে হল রুমে দীর্ঘ সময় বক্তব্য শুনেন।
বহুকাল থেকে মহেশখালী টু কক্সবাজার ফেরী ঘাটের অ-ব্যবস্থাপনার শিকার মহেশখালীর সাড়ে ৪ লক্ষ মানুূষ। যতবারই মহেশখালী জেটি ঘাটের অনিয়ম –অব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। নানান কলা কৌশলে ভেসে যায় গভীর সাগরে।
এ ফেরী ঘাটটিতে ভাল ভাবে যাতায়াতের জন্য অন্যতম দাবী ছিল ভাল মানে নৌ-যান। এই ভাল মানের নৌ-যান না দিতে পারার ব্যর্থতাকে ঘিরে মহেশখালী দ্বীপের মানুষের এতো হয়রানী ও এতো মানুষের মৃত্য।
পাকিস্তান আমল থেকে মহেশখালী টু কক্সবাজার ফেরী ঘাটে উন্নত কোন সার্ভিস চালু না হওয়ায় বছরের পর বছর মৃত্যুর মিছিল বড় হচ্ছে। সেবার মান নগন্য হলে ও যাত্রীদের নিকট থেকে নির্ধারিত ভাড়ার দুইগুন ভাড়া আদায় করে কৃত্রিম সংকট তৈরীর মাধ্যমে।
মারাত্মক ঢেউও বাতাসের মাঝেও ডিমের খোসার মত কিছু জরাঝির্ন পুরানো নৌকা দিয়ে মহেশখালীর সাধারণ যাত্রীদের মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে হয়।
বর্তমান সরকারের আমলে মহেশখালী টু কক্সবাজারের ফেরী সার্ভিস চালু করার নামে মহেশখালী জেটি ঘাটের সম্মুখ ভাগে ড্রেজিং করা হলে ও মুলত সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরবর্তন হয়নি। ড্রেজিং এর নামে বিপুল পরিমান পেরাবন নিধন ও সরকারী খাস জমি নদীর পার ভরাট করে সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে দখলের প্রতিযোগিতা শুরু করে।
তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে এই দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কাধায় পায়ে হেটে কাপড় তুলে নৌকায় উটার অমানবিক চিত্র থেকে পরিত্রান করতে মহেশখালীতে ৬৮ লক্ষ টাকা ব্যয় একটি জেটি নির্মান করা হয়। জেটি নিমার্ণ এর পর সাধারণ মানুষের জীবন মানের কিছু পরীবর্তন হলে ও জেটি ঘাটে উঠা নামার উপর টোল ব্যবস্থা চালু হলে স্থানীয় জন সাধারণের দাবীর মুখে তৎকালীন সাংসদ সদস্য মরহুম ইসহাক মিয়া ও বরণ্য শিক্ষাবিদ ড.সলিমুল্লাহ খানের প্রচেষ্টায় মহেশখালী জেটির যাতায়াত টোল বন্ধ হয়। সেই থেকে কস্তুুরা ঘাট ও পরবর্তীতে ৬নং জেটি ঘাটে টোল আদায়ের ব্যবস্থা বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান আছে। যা মহেশখালীতে আসা যাওয়া মানুষের নিকট থেকে আদায় করা হয়। এই ঘাটের এই অবৈধ টোল আদায় থেকে মহেশখালী ও কক্সবাজার কেন্দ্রীক অনেক রাগব বোয়াল ভাগভাটোয়ারা নেয় বলে ফেরী বা সেতু নিমার্ণে সরকারের প্রতি কোন ধরনের চাপ প্রয়োগের উদ্দেগ নেওয়া হয় না।
ছাত্রনেতৃবৃন্ধরা মানব বন্ধন পরবর্তী মহেশখালীর ইউএনও-র মাধ্যমে সরকারের নিকট বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেশ করেন। দাবি সমূহ হল : যে ফিশিং বোট যাত্রীবাহি গাম বোট কে ধাক্কা দেয় ও বাকখালী খারির মুখে অপরিকল্পিত ভাবে অবস্থান করা বালিবর্তি টেংকার মালিকদের আইনের আওতায় আনা।
অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে মহেশখালী টু কক্সবাজারের ফেরী বা সেতুর কাছ চালু করা।
সেতু বা ফেরী সার্ভিস চালুর পূর্বকালীন সময় পর্যন্ত মহেশখালী ও কক্সবাজার জেটি ঘাটে নানান সমস্যা নিরশনে প্রদক্ষেপ গ্রহন করা।
প্রতিটি বোটের প্রতিজন যাত্রীকে লাইফ জেগেট এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,জরাঝির্ন ও মেয়াদ উর্ত্তীন কাটের বোট ঘাট হইতে সরাইয়ে নিয়ে টিকসই উন্নত মানের নৌযান সংযোজন করা।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের সরিয়ে দক্ষ চালকদেরকে লাইসেন্স দিয়ে যাত্রী আনা নেওয়া করা।
প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর অতিরিক্ত যাত্রীছাড়া কাঠের বা ঘাম বোট ঘাট থেকে ছাড়ার নিয়ম চালু করা। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রোগী ব্যতিত কোন ব্যক্তির জন্য বোট চলাফেরা করা বন্ধ করা।
সন্ধ্যার পর থেকে ১জন স্পিট বোট ড্রাইবার নিয়মিত ভাবে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের আওতায় থাকতে হবে। রোগী বহনকারী বোটের নির্দৃষ্ট ভাড়া নির্ধারণ করে কন্ট্রোল নম্বার চালু করা।
রাতের নৌ চলাচলের সুবিধার্তে সাগরের দুইতীরে একদিক সিঙ্গনাল লাইটের ব্যবস্থা করা।
মহেশখালী টু কক্সবাজার এর সাগর পথে নৌ ট্রাফিকের ব্যবস্থা করা। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত দুই পারে যাত্রী বহনকারী সকল শ্রেনীর বোটের জন্য সিরিয়ান নির্ধারনের জন্য কন্ট্রোল রুম ব্যবস্থা চালু করা।
৬নং ঘাটে পন্যবহনে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন ও টোল আদায়ের ভাইচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করন। কোন নৌ দূঘর্টনায় সাগরে মানুষ ডুবে গেলে ঘাট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রæত উদ্ধার ব্যবস্থা নিশ্চিত করন। সাগরে নিহত তোফাইল সহ আরো যারা নৌ দূঘর্টনার কবলে পতিত হবে তাদের রাষ্ট্রীয় ভাবে ক্ষতি পুরন দেওয়ার ব্যবস্থা করা। অন্তত দৈনিক ২বার নৌ পুলিশের টলহ জোরদার করে যত্রতত্র জাল পাতা ও ফিশিং বোটের নৌঙ্গর করা বন্ধ করতে হবে।
জেটি ঘাটের উপরি ভাগে অবৈধ স্থাপনা নির্মানকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। যাত্রী ছাউনি যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করন করতে হবে। মহেশখালী উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবরে দাবী উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইফতেকার মোহাবত্ত আলী,সজিব মাহামুদ ও মহেশখালী প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর পারভেজ।