[english_date] | [bangla_day]

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে অলিগণের পরিচয়,মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী,
শিক্ষক ও ইসলামি চিন্তক।

মহান আল্লাহ জিন ও মানুষকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যারা আল্লাহ তায়ালার ইবাদতেের যথার্থ হক আদায় করতে পেরেছেন, তারাই আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। আর এর মাধ্যমেই তারা পরিণত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালার অলি হিসেবে। আল্লাহ তায়ালার অলিগণের থেকে কখনো যদি অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায়, সেগুলো কারামত।

অলি’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈকট্য, অভিভাবক, মুরব্বি, বন্ধু, নিকটবর্তী, সাহায্যকারী, প্রতিবেশী, প্রিয়ভাজন, অনুগত, কোনো কাজের জিম্মাদার,কর্তা, মালিক। আরবি ভাষায় ‘আউলিয়া’ শব্দটি ‘অলি’র বহুবচন।শব্দগতভাবে কখনো কখনো অলি শব্দের অর্থ করা হয় শাসক, অভিভাবক বা কর্তা।

অধিকাংশ আলিমগণের মতে, আল্লাহ তায়ালার মারিফাতের সাগরে ডুবন্ত ব্যক্তিকে অলি বলে। মুফতি সাইয়েদ আমীমুল ইহসান (রহ.) ফকীহগণের দৃষ্টিকোণ থেকে বলেন, অলি বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর গুণাবলির পরিচয় লাভ করেছে, সাধ্যমতো আনুগত্য প্রদর্শন করে, পাপের কাজ হতে বিরত থাকে এবং প্রকৃতিগত বিষয়াদি ও প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকে। মোটকথা, আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভকারী ও নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তিই ইসলামের দৃষ্টিতে অলি নামে প্রসিদ্ধ।

মহান আল্লাহ তায়ালা অলিগণের উচ্চ মর্যাদার কথা ব্যক্ত করে পবিত্র কুরঅানে ইরশাদ করেন, মনোযোগের সাথে শোন! নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার অলিগণের ভবিষ্যতে কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা অতীত কর্মের জন্য শঙ্কিতও হবে না এবং যারা ইমান এনে আল্লাহকে ভয় করতে থাকে। (সূরা : ইউনুস:৬২) হাদিসে এসেছে, তাঁরা এমন সম্প্রদায় যাদের মজলিসে কেউ বঞ্চিত হয় না। (মুসলিম শরিফ)।

হযরত জুন্নুন মিসরি (রহ.)-এর পীর আবু আলি শুকরান (রহ.) বলেন, আল্লাহ তায়ালার অলি ঐ ব্যক্তি যার খাদ্য তাই হয় যেটুকু সে পায়, যেখানে জায়গা পায় সেখানে তাঁর আবাসস্থল, সতর আবৃত করতে পারে এতটুকু বস্ত্রই তাঁর পোশাক, নির্জন স্থান যার মজলিস, কুরঅান যার আলাপ-আলোচনা, আল্লাহ তায়ালাই যার প্রিয়, যিকির যার সঙ্গী, সংসার ত্যাগ যার সাথী, নিরবতা যার প্রেম, আল্লাহ তায়ালার ভয় যার চলার পথ, আগ্রহ উদ্দীপনা যার বাহন, উপবাস যার আহার্য এবং আল্লাহ তায়ালা যার সাহায্যকারী।

আল্লাহ তায়ালার অলিগণের বৈশিষ্ট্য হলো, ইসলামি শরিয়তকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা। অলিগণের মৌলিক কাজ সম্পর্কে মুহাক্কিকগণ বলেন, ক. আল্লাহ তায়ালার কিতাব ও রসুল (সা.)-এর সুন্নাতকে বাস্তবায়ন করা। ২. সৎকাজের আদেশ দেওয়া। ৩. অন্যায় ও মন্দকাজে নিষেধ করা ও বাধা দেওয়া। ৪. নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করা। ৫. একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা। বুঝা গেল যে, অলিগণের মর্যাদা মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট অত্যধিক, কেননা তাঁরা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথ অনুসারে জীবন অতিবাহিত করে। তাঁদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যা আল্লাহ তায়ালার বাতলে দেওয়া নিয়ম মাফিক বিভিন্ন কার্যকলাপের দ্বারা প্রকাশ পায়।

অলিগণের জীবনচারণ থেকে শিক্ষা নিয়ে সে অনুযায়ী চলতে পারলে জীবনে সফলকাম হওয়া যাবে। অলিরা হলেন আল্লাহ তায়ালার বন্ধু,মুমিনের অভিভাবক সমতুল্য।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়