ডেস্ক রিপোর্ট: বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে। আজ সকালেও এটি নিম্নচাপ আকারে ছিল। এখন এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
আজ শনিবার রাতে এটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। এজন্য সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তখন এর নাম হবে ‘আম্ফান’।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি সামান্য পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এটি আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ‘আজ রাতে এটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। এখন এটা ঘণ্টায় ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার করে এগোচ্ছে। বাংলাদেশ উপকূল এখনো অনেক দূরে। ১৯ বা ২০ মে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি আসতে পারে।’
ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, বাংলাদেশ সময় শনিবার সন্ধ্যার দিকে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং রোববার সকাল নাগাদ সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) পরিণত হতে পারে। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার।
পরে শক্তি আরও বাড়িয়ে তা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বা তার বেশি।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস এখন প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর বিশেষ বুলেটিনে সর্বশেষ অবস্থা জানাচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সময় সময় সতর্কতার মাত্রা বাড়ানো হবে বলে জানান আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান।
এর আগে, এপ্রিলের শেষে ও মে মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী আম্ফানের আবির্ভাব ও প্রভাব পড়েনি। তবে সেটিই এখন নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে নাম হবে আম্ফান। তবে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আগে বেশকিছু স্তর রয়েছে। লঘুচাপ, সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ, তারপরের রূপটি হলো ঘূর্ণিঝড়।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি। এটা সাগরে আছে। যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, উপকূলীয় এলাকার দিকে আসে, তাহলে এটার প্রভাব পড়তে পারে। আর যদি ভারতের দিকে চলে যায়, তাহলে আমাদের এখানে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। এখনো ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়নি।’