চিটাগাং মেইল: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন করোনা ভাইরাস সংক্রামক প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারান্টাইন নিশ্চিতকরণ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে বাজার মনিটরিং ,রাস্তায় যানবাহনের চলাচল সীমিতকরণ, স্বপ্রণোদিত লকডাউন অপসারণ, বাড়ির নির্মাণ কাজ স্থগিতকরণ, ত্রাণ বিতরণ ও ওএমএস চাল বিক্রয়ে নিরাপদ দূরত্ব অনুসরণ এবং পবিত্র জুমা নামাযকে কেন্দ্র করে মসজিদগুলোতে মুসল্লীগণের জমায়েত নিরুৎসাহিতকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাঠে ছিলো চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০ টি টিম। এসময় ভ্রাম্যমান আদালতে ৫০ টি মামলায় ৬০,৫০০( ষাট হাজার পাঁচ শত) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
শুক্রবার ১৭ এপ্রিল সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত দুই শিফটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ।
কোতোয়ালি, সদরঘাট ও ডবলমুরিং এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন। অভিযানকালে তিনি একটি স্যানিটারি সামগ্রীর দোকানকে ১,০০০(এক হাজার) টাকা, দুইটি সেলুনকে ৮০০(আট শত) টাকা ও একটি টেলিকমের দোকানকে ৩০০(তিন শত) টাকা জরিমানা করেন। সামাজিক দূরত্ব না মানায় তিনি ৩টি পৃথক মামলায় ১,০০০(এক হাজার) টাকা অর্থদণ্ডের সাজা প্রদান করেন এবং একটি বেকারিকে পৃথক একটি মামলায় ১,০০০(এক হাজার) টাকা জরিমানা করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা জেরিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন পাঁচলাইশ,খুলশী ও বায়েজিদ এলাকায়। তিনি জানান,হিলভিউ আবাসিক এলাকায় গরুর পচা মাংস বিক্রি করায় একজন দোকানীকে ৫,০০০(পাচ হাজার ) টাকা এবং সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সেলুন, টেইলার্স, হার্ডওয়ার ও কাপড়ের দোকান খোলা রাখায় ৭টি মামলায় ৭ জনকে ৬,৫০০( ছয় হাজার পাঁচশত) টাকা জরিমানা করা হয়। জুমার দিন হওয়ায় মসজিদগুলোতে যেন জনসমাগম না হয় সেজন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিং করা হয় এবং জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদের ৫টি গেট বন্ধ করা হয়।”
নগরীর বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা থানাধীন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হাসান। তিনি সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে দোকান খোলা রাখায় বন্দর এলাকায় একটি টাইলসের দোকানকে ৫,০০০(পাঁচ হাজার) টাকা এবং একটি টেইলরের দোকানকে ১,০০০(এক হাজার) টাকা জরিমানা করেন। এসময় অপ্রয়োজনে বাহিরে ঘোরাফেরা করায় তিনি নেভি হাসপাতাল গেট এলাকায় দুইজনকে ৩,০০০(তিন হাজার) টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।
নগরীর আকবরশাহ, পাহাড়তলি, হালিশহর এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলমগীর। অভিযান পরিচালনা শেষে তিনি জানান, “সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর আওতায় ৭টি ভিন্ন ভিন্ন মামলায় ৮,২০০( আট হাজার দুই শত) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পাশাপাশি এক ডাক্তার দম্পতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাহাড়তলী থানাধীন বাচা মিয়া রোড এলাকায় অত্যুৎসাহী এলাকাবাসী কর্তৃক স্থাপিত লকডাউন সরিয়ে ফেলা হয় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত উক্ত কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে এলাকাবাসীকে সতর্ক হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আলী হাসান চান্দগাঁও, চকবাজার, বাকলিয়া এলাকায় কাঁচা বাজার পরিদর্শন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে নগরবাসীকে মাইকিং এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সচেতন করেন। এ সময়ে এসব এলাকায় মোট ১৩টি মামলায় সর্বমোট ১৯,৭০০( ঊনিশ হাজার সাতশত) জরিমানা করেন। যৌক্তিক কারন ব্যতীত যাত্রীদের রিক্সা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার সহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল বন্ধ করেন। তাছাড়া তিনি অভিযানকালে দেওয়ানবাজার এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের কাজ স্থগিত করে মালিক ও শ্রমিকদের নিকট থেকে মুচলেকা আদায় করেন।
নগরীর চান্দগাঁও, চকবাজার ও বাকলিয়া থানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদ শিকদার। তিনি জানান, “অভিযানের শুরু করার সময় চান্দগাঁও মোহরা কাজির হাট বাজার এলাকায় প্রচুর লোক সমাগম দেখা যায়। স্থানীয় থানার সহায়তা নিয়ে মাইকিং এর মাধ্যমে সেখানে জনগণকে সচেতন করা হয়।” তিনি তিনটি মামলায় ২,০০০(দুই হাজার) জরিমানার আদেশ প্রদান দেন।
পাহাড়তলী এলাকায় সামাজিক দূরত্ব না মানায় এক মোটরবাইক চালককে ৫০০( পাঁচ শত) টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুবকর সিদ্দিক।
পাঁচলাইশ, খুলশী, বায়েজিদ এলাকায় অভিযান চালায় ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনূন আহমেদ অনীক। এসময় তিনি ২ টি মামলায় ১,৫০০(এক হাজার পাঁচশত) টাকা জরিমানা করেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শেরশাহ, বায়েজিদ, আতুরার ডিপো ও ঝাউতলা বস্তি এলাকায় এ জরিমানা করা হয়েছে।
সদরঘাট, কোতয়ালী ও ডবলমুরিং থানায় ২ টি মামলায় ৩,২০০(তিন হাজার দুইশত) টাকা অর্থদন্ড করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তাহমিনা শারমিন।
এছাড়াও বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা এলাকায় অভিযান চালায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদ। এসময় তিনি ২টি মামলায় ৮০০( আটশত) টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।