[english_date] | [bangla_day]

গর্ভপাত করাতে গিয়ে মৃত্যু: করোনায় মৃত বলে প্রচার করেছিল সিটি হেলথ

চিটাগাং মেইল : প্রেমিকের ‘ধর্ষণে’ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে মেয়েটি। এরপর গর্ভপাত করানোর জন্য তাকে চকবাজার সিটি হেলথ্ ক্লিনিকে নিয়ে যায় প্রেমিক। কিন্তু ওই ক্লিনিকে ছিল না কোনো ডাক্তার। প্রশিক্ষণ ছাড়াই নার্স বনে যাওয়া কয়েকজন নারী অবৈধভাবে তার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করে। এতে মেয়েটির অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু অবৈধ গর্ভপাতের বিষয়টি ধরা পড়ার ভয়ে একদিন পরও ভালো কোনো চিকিৎসকের কাছে মেয়েটিকে পাঠায়নি ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এভাবে তিলে তিলে মেয়েটিকে মুত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তারা।

ক্লিনিকটিতে নেয়ার একদিন পর মেয়েটি মারা গেলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে কথিত প্রেমিক। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা ক্লিনিকে উপস্থিত হলে একেকজন একেক কথা বলতে থাকেন। এতে তাদের সন্দেহ হলে ঘটনার ১২ দিন পর চকবাজার থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে কথিত প্রেমিক আবুল কালাম মো. সেজানকে গ্রেফতার করে। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আবুল কালাম মো. সেজান।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার ক্লিনিকটির মালিক হারুন অর রশিদসহ (৬০) চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি তিনজন হলেন, প্রতিষ্ঠানটির কথিত নার্স অলকা পাল (৩২), গীতা দাস (৪৫) ও সাবিনা ইয়াসমিন চম্পা (৪৩)। তাদের মধ্যে অলকা পাল বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বাকি তিনজনকে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান।

এসএম মেহেদী হাসান বলেন, গর্ভপাতে মৃত্যুর বিষয়ে স্বজনরা ১২দিন পর থানায় অভিযোগ করেন। এরপর তদন্তে নেমে আমরা দেখতে পাই, এটা অবহেলায় মৃত্যু নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গর্ভপাত করানো অবৈধ হওয়ার কারণে জানাজানি হওয়ার ভয়ে মেয়েটির অবস্থার অবনতি হলেও ক্লিনিকটি ভালো কোনো চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। মেয়েটির গর্ভপাত করোনার জন্য যারা যুক্ত ছিল, তাদের কেউ চিকিৎসক নয়। যে নার্সরা অংশ নিয়েছিল তাদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই।

তিনি বলেন, বুধবার সিটি হেলথ ক্লিনিকের মালিক হারুন অর রশিদ, নার্স অলকা পালসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে জানানো হলে তিনি বুধবার রাতে ক্লিনিকটিতে অভিযান চালান। এ সময় হারুনকেও আমরা হাজির করি। তখন ক্লিনিক চালানোর জন্য কোন অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। শুধুমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে সিটি হেলথ ক্লিনিকটি চালানো হচ্ছিল এতদিন ধরে। পরে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেন সিভিল সার্জন।

এস এম মেহেদী হাসান জানান, মেয়েটিসহ অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কোনো তথ্য সিটি হেলথ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে না, যাতে তাদের অপকর্মের প্রমাণ না থাকে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গর্ভপাত করানো হচ্ছিল। শুধুমাত্র অবৈধ গর্ভপাতের বিষয়টি গোপন করার জন্য মেয়েটির অবস্থার অবনতি হলেও ভালো কোনো হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে পাঠায়নি সিটি হেলথ ক্লিনিকের লোকজন। এভাবে তিলে তিলে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ, সহকারী কমিশনার (চকবাজার জোন) মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম ও চকবাজার থানার ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমীন উপস্থিত ছিলেন।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়