[english_date] | [bangla_day]

চিন্তা ও করোনা : এডভোকেট ধৃতিমান আইচ

চিটাগাং মেইল : করোনা। কভিড- ১৯। হোম কোরেন্টাইন। লকডাউন। মৃত্যু। জ্বর,সর্দি, কাশি। মহা আতঙ্ক। অলস অবসর। নেই কাজ।নেই রোজগার। সব বন্ধ। খরচ থেমে নেই। এমন এক অবস্থা দেশে দেশে। চিন্তা তো আসবে এটাই স্বাভাবিক।

নিত্য নতুন উপসর্গ, নতুন অপরিচিত রোগের সাথে ঢাল তলোয়ার বিহীন যুদ্ধ। ঢাল তলোয়ার বিহীন যুদ্ধ বলছি এই কারণে সঠিক ও যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।পরীক্ষামূলক চিকিৎসা চলমান। সব মিলিয়ে সুচিন্তার চেয়ে দুশ্চিন্তা অগ্রভাগে থাকা অমূলক নয়। যে পরিবারে কোন স্বজন বিদেশে বা প্রবাসে তাদের আবার দুদিকের চিন্তা। নিজ দেশের এবং প্রবাসের। চর্তুমুখী চিন্তার আবর্তে সকল মানুষ।

এই চিন্তার মূল হোতা মহামারী করোনা।করোনা কি কৃত্রিম না প্রাকৃতিক? এই নিয়ে কল্পনা জল্পনার এখনো অবসান হয়নি। হবেও না। কারণ এটি বিশ্ব রাজনীতির কৌশল নাকি সত্য ঘটনা তা এখনো পরিস্কার হয়নি। সমগ্র বিশ্বকে কাঁপুনি দেয়া মহামারী করোনা নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে উন্নত দেশগুলোকে। অর্থাৎ বিনাযুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এত মৃত্যু অতীতে হয়েছে কিনা এমন নজির তেমন নেই। প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলেও তা দুই তিনটা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।তেমনি যুদ্ধ হলেও তাও দু’চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।করোনা গৃহবন্দী করেছে স্বাধীন মানুষকে।

অনেক পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। যেমন খুশী তেমন করা থেকে বিরত।যেমন খুশি তেমন ঘুরা থেকে বিরত।প্রত্যেকটা দেশকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তার অর্থনীতি, তার নাগরিকদের নিয়ে,নাগরিকদের কর্মসংস্থান নিয়ে, আহার নিয়ে, সমস্যা সংকুল পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের পথ।বেসামাল প্রতিটি দেশের সরকার প্রধান তথা শাসকদল।অনেক দেশে সরকার প্রধান তথা শাসকদল এর সাথে সর্বস্তরের জনগণ একাকার হয়ে উত্তোরণের বা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কারণ আমরা বেশি মাত্রায় রাজনীতি সচেতন।

আমরা সরকারি পদক্ষেপের দোষ ত্রুটি খুঁজে বের করতে ব্যাকুল। করোনার আক্রমণ মোকাবিলার চিন্তায় যখন সাধারণ মানুষ ব্যাকুল, গৃহবন্দী, দিশেহারা তথ্যের অত্যাচারে বিভ্রান্ত এবং আক্ষরিক অর্থেই নতজানু হয়ে পথ খুঁজছেন তখনও আস্তিন গুটিয়ে রাজনীতির চিরায়িত খেলা এবং মুষ্টিযুদ্ধ। অনেকের প্রশ্ন এই প্রলয়ের কালে এটা কি ভুলে থাকা যায়না। আপনি বেঁচে থাকলেই তো রাজনীতি। আপনার পরিবার এর সদস্যরা বেঁচে থাকলে তো আপনার বেঁচে থাকা এবং রাজনীতি। আপনি যার জন্য রাজনীতি করছেন সেই নেতা বেঁচে থাকলে ও তো আপনার রাজনীতি। সুতরাং এই দূশ্চিন্তার দুঃসময়ে রাজনীতি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যার কাছে উন্নত দেশগুলো পরাস্ত হয়েছে সেই অজানা শক্তির বিরুদ্ধে।

উন্নত দেশগুলোকে করোনার কারণে যেসব সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের দেশে এখনও ঐসব সমস্যার মুখোমুখি হয়নি।অনেক দেশে মানুষের কাছে টাকা ছিল কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনার যোগান বা সরবরাহ ছিলনা।অনেক দেশে রাস্তায় টাকা বা ডলার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকার সচিত্র সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। আপনার কাছে টাকা থাকলে ও আপনি যে আহার করতে পারবেন তার গ্যারান্টি নাই। আপনার বা আমার অবস্থা আজকে আমার পাশের যে গরীব লোকটি অভুক্ত আছে তার মত হতে পারে। সে চিন্তা আপনার বা আমার মাথায় আসলে আর অভুক্ত থাকবে না গরীব লোকটি।
সাহায্যের হাত প্রসারিত হবে সেসব ধনী লোকদের হাত যারা এখনও তাদের হাত প্রসারিত করেনি এই দুঃসময়ে। কাল মরে গেলে কি হবে আপনার এই অর্থ? এসব ধনী লোকদের, রাজনীতিবিদদের, সুশীল ব্যক্তিদের অবস্থান এই মুহূর্তে বিবেচনায় নিলে মানুষের মনে চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক।তবে অনেক ধনী লোকরা, রাজনীতিবিদরা এগিয়ে এসেছেন।সবাই এগিয়ে আসলে আমাদের দেশ ভালো পর্যায়ে থাকবে।

চিন্তা আসাটা স্বাভাবিক কারণ যখন দেখি আমাদের প্রতিদিনের নিত্যনতুন খবর পৌছানোর জন্য রাতদিন কষ্ট করছে যেসব সাংবাদিক তারা আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। যেসব পুলিশ অফিসার নিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক কাজে সম্পৃক্ত তারা আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। যেসব ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী রোগীর সেবা দিচ্ছে তারা আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে, প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। করোনার কারণে যে চিন্তা তা দূশ্চিন্তা না হয়ে সুচিন্তা, ভালো চিন্তা আসুক সকলের মনে।

সুচিন্তায় এই মহামারী থেকে উত্তোরণের পথ বের হোক,নতুন উদ্ভাবনের মন্ত্রে উজ্জীবিত হোক উদ্ভাবকরা,সৃষ্টি হোক নব পরিকল্পনার চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষময় পরিমন্ডল,আবিষ্কৃত হোক পরমাণুর বিপরীতে জীবাণু ধ্বংসের পদ্ধতি। মানবতা ও মানব কল্যাণের দেশ ও পৃথিবী গড়ে উঠুক।

লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠক।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়