[english_date] | [bangla_day]

হাসি নেই রাঙ্গুনিয়ার কামার শিল্পীদের মুখে

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধিঃ আর পাঁচ দিন পরেই মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কামার শিল্পীরা। এবারের ঈদ করোনাকালে হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় ব্যস্ততা কিছুটা কম। তবে গত কয়েকমাস যাবত কামার পট্টিতে ‘টুং টাং’ শব্দ শোনা না গেলেও এখন কিন্তু সেই পুরনো শব্দে মুখরিত হচ্ছে উপজেলার কামার পট্টি গুলো। এই ঈদে করোনার ক্ষতি পোষাতে মরিয়া তারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার রোয়াজারহাট, রাণীরহাট, ধামাইরহাট, মোগলেরহাট, রাজারহাট, শিলক বাজার, চন্দ্রঘোনা সহ বিভিন্ন হাট-বাজারের কামারপল্লীতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বটি, চাকু, কুঠার, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি ও মেরামতের কাজ করছে কামার শিল্পীরা। দম ফেলবারও যেন সময় তারা পাচ্ছেন না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা কাজ করছেন। কামার শিল্পীরা বিভিন্নস্থান থেকে লোহা কিনে এনে সেগুলো আগুনে পুড়ে দা, বটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছেন। কোরবানিতে পশু জবেহ ও মাংস কাটাকুটিতে এসব ব্যবহার্য জিনিস স্থানীয়রা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে কিছুটা জমে উঠেছে এ শিল্প। আর এই সময়ে কাজের চাপ বেশি হওয়ায় অনেক স্থানে দেখা মিলছে মৌসুমী কামারদেরও। তারা এ মৌসুমে কেও রাস্তার পাশে জায়গা ভাড়া নিয়ে আবার কেও নতুন করে ঘর ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে দা, ছুরি, চাকু তৈরী ও সান দেয়ার কাজে নেমে পড়েছেন।

রাণীরহাট বাজারের অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসা কামার শিল্পী শম্ভূ কর্মকার জানান, এক সময় আমাদের লোহার তৈরী দা, বটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে, ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতি মানুষ তেমন একটা কিনছেন না। হয়তোবা এক সময় এই পেশাই আর থাকবেনা। তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো তেমন ক্রেতার সমাগম হচ্ছেনা।

চন্দ্রঘোনা এলাকার কামার শিল্পী সাধন কর্মকার বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই কাজ করে আসছে। তাই আমরা সে পেশা ধরে রেখেছি। সারা বছর তেমন কোন কাজ না থাকলেও কোরবানীর সময় আমাদের তৈরী সরঞ্জামের চাহিদা বেড়ে যায়। একটি দা, বটি ও ছুরি পাইন দিতে (সান দিতে) ৫০ থেকে ৮০ টাকা আর তৈরি করতে গেলে মজুরিসহ এক কেজি ওজনের একেকটি দা, বটি, চাপাতি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একই এলাকার প্রবীন কামার শিল্পী শ্যাম কর্মকার বলেন, মোটামুটি এখন আমরা ভাল আছি। পরিবার নিয়ে কিছুটা সুখে আছি। প্রতি বছর ঈদে আমাদের ব্যবসা ভাল হয়। তবে এবার করোনার কারণে কাজ কিছুটা কম। তিনি বলেন, গত কয়েকমাস আমরা অনেক কষ্টে ছিলাম। তবে ঈদ আসায়, সবকিছু খুলে দেওয়ায় ব্যবসা ভাল হচ্ছে। আমরা এই কিছু দিনের মধ্যে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাই

দা কিনতে আসা ধামাইরহাট এলাকায় মো. জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, করোনার প্রভাবে দাম বেড়েছে দা-ছুটির। আগে যে দা ৪০০-৫০০টাকার মধ্যে কিনতাম এ বছর তা ৮০০টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে।

রাজারহাট এলাকার দা-ছুরিতে শান দিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, প্রতি বছর কুরবানীর ঈদে ২-৩টা দা-ছুরি কিনে থাকলেও এবার টাকার সমস্যার কারণে পুরাতন দা-ছুরি শান দিতে এসেছি।

এ ব্যাপারে রোয়াজারহাট এলাকার কামার শিল্পী দীপক কর্মকার বলেন, এই পেশায় এখনো আমরা যারা আছি তারা খুবই অবহেলিত। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হলেও সে অনুযায়ী আমরা আমাদের তৈরী করা সরঞ্জামের ন্যায্যমূল্য পাইনা। এখন আমাদের লোহাও বেশী দামে কিনতে হয়। এই পেশায় থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। ভবিষ্যতে সরকারী কোন আর্থিক সহযোগিতা না পেলে হয়তো এ শিল্প একদিন হারিয়ে যাবে।

বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই শিল্পীরা, তবে আছে দুঃখ গাঁথা গল্প। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল সবকিছু। সেই সাথে বন্ধ ছিল কামার পট্টিও। তবে গত কয়েকদিন যাবত সবকিছু আবারও চালু হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে এই সব নিম্ন আয়ের মানুষদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। তবে সারাবছর কিছু না কিছু কাজ হলেও এবার করোনায় কাজ ছিল না। বন্ধ ছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এমন একটি সময়ের আশায় মুখিয়ে থাকেন তারা। কিন্তু করোনার প্রভাবে হতাশায় এসব কামার শিল্পীরা।

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

পাঠক প্রিয়